• এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ
– জীবনে বহুবারই এমন বা ঠিক এ ধরনের কথা শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। হয়তো আপনাদের অনেকেরও রয়েছে এমনই অভিজ্ঞতা। কিছুদিন আগেও যখন এমন পরিস্থিতিতে পড়তাম, নিজেকে খুব অসহায় লাগতো। বেশ কয়েকবার ছুটেছি এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও।
কাউন্টারের সামনেই দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকতে থাকা প্রজাতন্ত্রের পবিত্র কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে গেছি; অভিযোগ করেছি। তবে বিনিময়ে কেবলই পেয়েছি তাচ্ছিল্য আর হতাশার বাণী।
মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিলো তখন থেকেই। যদি কখনো সুযোগ হয় তবে অবশ্যই এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো যে তারা যা করছে তা অনুচিত, শাস্তিযোগ্য অপরাধ!
ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিলো না। কারণ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই দেখা যায় অনেক জায়গায় ধর্মঘট ডেকে বসেন বাস মালিকরা; বিষয়টা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তাই বলে কি আইনের গতি থেমে থাকবে? কখনোই না!
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নির্দেশনা পেয়ে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চালালাম বাগেরহাটের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে। বাস্তব অবস্থা রীতিমত অরাজকতার সব গল্পের দৃশ্যকেও হার মানায়।
৪০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি বাসে বসানো হয়েছে ৬০-৭০ জন করে। ছাদে নেয়া হয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০জন। ৩৭০ টাকা মূল্যের একটি টিকেটের দাম নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত। অতিরিক্ত এই ভাড়া নেওয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এবং ইঞ্জিন কাভার ও টুলে বসিয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে বাসগুলো।
যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ নেওয়া হয়েছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে তাও ফেরত দেওয়া হলো তাদের। যাত্রা পথে সাধারণ যাত্রীদের আবারও যেন কোন হয়রানীর স্বীকার হতে না হয়, এজন্য নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দিলাম যাত্রীদের। ড্রাইভার বা সুপারভাইজার পথে কোন প্রকার ব্যাকমেইলিং এর চেষ্টা করলেই ফোন দিতে অনুরোধ জানালাম যাত্রীদের।
ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে অনেক গাড়িকেই প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। পড়ে যাত্রীদের কাছে মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে গেলে তারা উল্টো উৎসাহ দেন; বলেন, প্রয়োজনে তারা আরও ঘণ্টা ভর অপেক্ষা করবেন কিন্তু এসব অন্যায়ের শাস্তি দিতে হবে।
– সত্যিই কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহ এবং সহযোগিতা দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
দিন শেষে ছোট্ট একটা প্রাপ্তি মনের মধ্যে কাজ করছে, আজকে অন্তত কিছু মানুষের উপকার করতে পারলাম। একসময় অভিযোগ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়া কিশোর ছেলেটা আজ কারো অভিযোগের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারল।
ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু, কলিগ এবং জেলা প্রশাসন, বাগেরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এবং প্রিয় অনুজ সহকর্মী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার। আপনাদের সহযোগীতা ছাড়া এই অভিযান সফল করা সম্ভব হতো না।
অন্যায় এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ্।