বছর দুয়েক আগেও পুরনো এই রেওয়াজটি সরাসরি সম্প্রচার করতোনা কোন টেলিভিশন। রিপোর্টাররা আলাদাভাবে পরীক্ষার্থী এবং মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে এসে রিপোর্ট তৈরি করতেন। টেলিভিশনে এখন ‘লাইভ’ ফ্যাশন চলছে। সেই ফ্যাশনের জোয়ারে এবার ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রীর পরীক্ষা কেন্দ্র প্রদর্শনটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে কোন কোন টেলিভিশন। সেই লাইভ সম্প্রচার দেখেই আতঁকে উঠেছি।
তখন পরীক্ষা শুরুর প্রথম ১০ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে মাত্র। প্রথম পরীক্ষার একটা নার্ভাসনেসতো আছেই। সেই সঙ্গে প্রশ্নপত্রটি বুঝে উঠার আগেই মন্ত্রী মহোদয় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলেন। তার সঙ্গে হুরমুর করে ঢুকে পড়লেন টেলিভিশনের রিপোর্টার-ক্যামেরাম্যানরা। সংখ্যায় ত্রিশের কম নয়। আর মন্ত্রী মহোদয়ের পারিষদরাতো আছেনই।
মূহুর্তেই পরীক্ষাকেন্দ্র রূপ নিলো কনফারেন্স রুমে। টেলিভিশন কর্মীরা আর নিরবে কাজটি করতে পারলেননা। সঙ্গে তাদের ক্যামেরার বাড়তি আলো জ্বললো। নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি চললো মন্ত্রীর ভাল এঙ্গেলের ছবি নেওয়ার। মন্ত্রী মহোদয়ও ক্যামেরার প্রয়োজনে একটু বাড়তিই কথাই বললেন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে। ততোক্ষণে আরো মিনিট দশেক সময় পেরিয়ে গেলো। পরীক্ষার্থীরা মনোযোগী হতে পারলো না তাদের প্রশ্নপত্রে।
তাদের কাছ থেকে মিনিট বিশেক সময় হারিয়ে গেলো। জানার ইচ্ছে মন্ত্রী মহোদয় এবং মিডিয়া কর্মীরা যে ২০ মিনিট অপচয় করলেন, সেই সময়টুকু কি পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের পর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল? খোঁজ নিয়ে যতোটুকু জেনেছি দেওয়া হয়নি। কিন্তু ২০ মিনিট অপচয়ের জন্য যদি কোন পরীক্ষার্থী উত্তর লেখা সম্পন্ন করতে না পারে তার দায় নেবে কে, মন্ত্রী নাকি গণমাধ্যম?
মাননীয় মন্ত্রীসহ আমরা সবাই পরীক্ষার টেবিলে বসে এসেছি, বিশেষ করে এসএসসি বা এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায়। আমরা জানি, পরীক্ষার হলে কারো হাত থেকে কলম পরে গেলেও, সব পরীক্ষার্থীর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। তাহলে মন্ত্রী মহোদয়দের পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে দেখার এই অভিভাবকত্বের ব্যাঘাতটি কতোটা? এটি যারা ঐ হলগুলোতে বসে পরীক্ষা দেন তারাই আসলে অনুভব করতে পারেন।
শিক্ষামন্ত্রীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার জনমানুষ ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রথম দফায় শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই তুলে দেয়ায় সফল হয়েছেন। তাই তার কাছে হয়তো শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রত্যাশাও বেশি।
সেই বেশি প্রত্যাশাটুকু থেকেই অনুরোধ রাখতে চাই-তিনি আগামী এইচএসসি পরীক্ষাতেই ক্যামেরা এবং পারিষদের বহর নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকবেননা। তিনি হলের বারান্দা বা দরজায় দাড়িঁয়েও কাজটি সারতে পারেন। হল পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে এসে কথা বলবেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। এতে তার পরফরমেন্স এবং দক্ষতায় বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বেনা। বরং দায়িত্ববোধ প্রকাশিত হবে। একইভাবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বদলে ফেলতে হবে তাদের কভারেজ প্ল্যান। পরীক্ষাথীরা পরীক্ষার হলে ঢুকছে, মন্ত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র ঢুকছেন এতোটুকু ফুটেজের সঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্য জুড়ে দেবেন। এতে পরীক্ষার্থীরা মন্ত্রীর কভারেজ বিড়ম্বনা ও মিডিয়ার দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা পাবে। লেখাটি মন্ত্রী মহোদয় এবং গণমাধ্যম কতোটা আমলে নিলো তা দেখতে সামনের এইচএসসি পরীক্ষার অপেক্ষায় রইলাম।