বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সংরক্ষণ এবং সুরক্ষায় আসতে পারে এ ম্যানগ্রোভ বনে সব ধরনের সম্পদ আহরণে নিষেধাজ্ঞা।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিশের রক্ষাকবচ সুন্দরবনের সুরক্ষায় এ বনে সব ধরনের গাছ, গোলপাতা, ছন, মধু, মোম, কাঁকড়া ও মৎস আহরণ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। আর এর জন্য বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বনের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে চিন্তা করছে সরকার।
বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই বনকে সম্পূর্ণ রুপে কেবল মাত্র বন্যপ্রাণী অভয়আরণ্য হিসাবে ব্যবহারের ব্যাপারে আলোচনা চলেও ইকো ট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) জন্য খোলা থাকবে সুন্দরবন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান গেছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ওই বৈঠকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রাথমিক ভাবে অন্তত্য ১০ বছরের জন্য সংরক্ষত বনাঞ্চল সুন্দরবনে সকল প্রকার বনজ সম্পদ আহরণ বন্ধের সরকারি নির্দেশ জন্য দাবি জানান হয়। তবে এবিষয়ে কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা কবে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে সে বিষয়ে কোন পূর্ণঙ্গ সমজোতায় পৌছাতে না পারার কথাও জানয় সূত্রটি।
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এবনের প্রাকৃতিক ও মৎস্য সম্পদ থেকে বন বিভাগ গড়ে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা আয় করে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের চোরা শিকারী-কাঠ পাচারকারীদের দৌরত্ব ও ছোট-বড় ২৫ টি বনদস্যু বাহিনীর হাতে মুক্তিপনের দাবীতে জেলে ও বনজীবীদের অপহরণের ঘটনা বন্ধ হবে।
৪৫০ টি ছোট বড় নদ-নদী ও খাল নিয়ে এর জলভাগের পরিমান প্রায় ১ হাজার ৮শ ৮৪ বর্গকিলোমিটার। ৪টি রেঞ্জের ৫০টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে বনের মোট আয়তন ৪ হাজার ১শ ৪৩ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরী, গেওয়া, পশুরসহ এবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অকির্ড রয়েছে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতীর সরিসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৩শ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বনবিভাগের হিসাব মনে বর্তমানে সুন্দরবনে ৪৪৪ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেড় লাখ হরিণ, ৫০ হাজার বানর, ২৫ হাজার বন্য শূকর, ২৫ হাজার উট বিড়াল ও ২ শ লবন পানির কুমির রয়েছে।
গড়ে প্রায় ১ লাক্ষ দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রতিবছর সুন্দরবনে আসে। রাত-দিন ২৪ ঘন্টায় প্রাকৃতিক ভাবে ৬ বার রূপ পাল্টানো এই সুন্দরবনে বিপুল পরিমানে প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি পর্যটকরা কটকার কাছে জামতলা সী বিচে বসে সুর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে। এবনে কচিখালী-কটকা, নীলকমল ও দক্ষিন অভয়ারণ্য নামে ৩ টি অভয়ারণ্য রয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুই হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য এই সুন্দরবন।
সুন্দরবনের বনদস্যুতাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওই সভা থেকে এবনের সুরক্ষায় সব ধরনের সম্পদ আহরন বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়। বনের উপরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানে বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়।
তিনি জনান, সুন্দরবনে ইকো ট্যুরিস্টদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিসহ তাদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত সমূহ প্রধানমন্ত্রী অনুমোদ করলেই তা দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।