গত তিন দিনের মতো সোমবার দুপুরেও জোয়ারের পানিতে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, মাছের ঘের, গবাদি পশু, হাস-মুরগি এমন কি রান্নার চুলা পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে পানি বন্দি এসব মানুষ।
সোমবার দুপুরে সরোজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার রহিমাবাদ, বেমরতা, খাড়াসম্বল, বিষ্ণুপুর, হাড়িখালীসহ বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কোথাও কোথাও সড়কের উপর দিয়ে বইছে পনির স্রত। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতঘরের আসবাবপত্র, টিভি-ফ্রিজসহ মূল্যবান দ্রব্যাদি।
রহিমাবাদ এলাকার মো. মুরাদ জানান, বর্ষা মৌসুমে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার তিথিতে নদীতে পানি বাড়লে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তাই জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে বাঁধের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
তবে পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলা। বেড়িবাঁধ না থাকায় এই দুই উপজেলার পৌর শহরসহ অন্তত্য ৩০টি গ্রাম প্রতিদিন দিনে দু’বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোরেলগঞ্জ উপজেলার কুমারখালী, সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, গাবতলা, কাঠালতলা, পাঠামারা, বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, বড়বাদুরা, বারইখালী, শ্রেণিখালী, শোনাখালী, পঞ্চকরণ, ঘসিয়াখালী, বহরবুনিয়া, ফুলহাতা।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে পূর্ণিমা এবং জোঘার সময় প্রতিদিন অস্বাভাবিক জোয়ারে দিনে দু’বার প্লাবিত হয়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো।
জোয়ারের পানিতে দিনে দু’বার উপজেলা সদরের সড়কগুলো চলে যায় দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে। শতশত কাঁচা ঘর ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বসতবাড়ি গুলো পড়েছে ঝুকির মধ্যে।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মোরেলগঞ্জ সদর বাজারের দুইশতাধীক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেনা-বেচা। ফলে চলতি ঈদ মৌসুমে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন এখান কার ব্যবসায়ীরা।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর, মংলা পৌরসভা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ নিচু এলাকার বেশকিছু গ্রাম তলিয়ে গেছে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। তবে ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দিন দিন উপকূলীয় নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় মৎস্য সমিতির শরণখোলা উপজেলার সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, সাগরে এখন প্রচনণ্ড ঢেউ। একারণে অধিকাংশ ট্রলার পাথরঘাটা, মহিপুর ও শরণখোলাসহ নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছে। আর প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে যেসমস্ত ট্রলার মাছ ধরছিল সেগুলোও সাগর ছেড়ে সুন্দরবনের বিভিণ্ন নদী ও খালে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরো জানান, ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই একদিকে সাগরে দস্যুদের উৎপাত। অন্যদিকে কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে জাল ফেলতে না পেরে মহাজন ও জেলেরা কিছুটা হতাশায় পড়েছেন।