প্রশাসন, পুলিশ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা দখল করে থাকা আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে রাজপথে মোকাবেলা করার ক্ষমতাই আসলে নেই বাগেরহাট বিএনপির। সারাদেশের চিত্রও একই।
এ মন্তব্য বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দীপুর।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক আন্দোলন, বাগেরহাট বিএনপির বর্তমান শক্তি ও তৃণমূলের রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে মোকাবেলার অক্ষমতা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এতো সবের পরও এটা স্বীকার করতে হবে, আওয়ামী লীগকে ফাইট আউট করার জন্য যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, বিএনপি তা অর্জন করতে পারেনি।
দীপু বলেন, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ‘নিয়োগপ্রাপ্ত’ নেতাদের মাধ্যমে কেউ চালাতে চায়, তার ফলাফল যে ভালো হবে না, সে সত্যই এখন সারাদেশের বিএনপির চিত্র প্রমাণ করছে।
বাগেরহাট বিএনপি সম্পর্কে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে সারা দেশের মতো বাগেরহাটে কেবল বিএনপির নেতারা নয়, কর্মীরাও আন্দোলনের জন্য মরিয়া। তবে এক্ষেত্রে এখানকার বিএনপির যে সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে, তাও উপেক্ষা করার মতো নয়। সাধারণত পুলিশ, ৠাব, কখনো কখনো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার জন্য সাংগঠনিক যে শক্তি বা ভিত্তি দরকার, সেক্ষেত্রেও বিএনপির দুর্বলতা রয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুর্বলতার নানাবিধ কারণ আছে। প্রথমত: কেন্দ্রের জেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব বাছাইয়ের যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি তার সমালোচনা করব। এটা বিবেচনাপ্রসূত নয়। বিশেষ করে কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন করে দেওয়া হয়। এসব নিয়োগপ্রাপ্ত নেতা প্রকৃত কর্মীমুখি যেমন হয় না, তেমনি আন্দোলনে কর্মীদের সংগঠিত করার ব্যাপারে আস্থাহীনতায়ও ভোগে। কর্মীরাও ওই নেতৃত্বের প্রতি নির্ভরশীল হতে চায় না। ফলে দল ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে। ফলে, পছন্দের কয়জনকে নিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা স্বার্থক হয়না বলা যায়।
দ্বিতীয়ত: বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘমেয়াদ উত্তীর্ণতা নেতাকর্মীদের সংগঠন বিকাশকে নিষ্ক্রিয় করে। ফলে আন্দোলন কর্মসূচিও যথার্থভাবে এগুতে পারেনা। মূল নেতৃত্বে রাজনৈতিক ব্যক্তি অপেক্ষা বিত্তবান ধনাঢ্য শ্রেণির প্রাধান্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অপেক্ষা দলকে আপোসকামী করে ফেলে। ফলে প্রশাসন ও সরকারি দলের সুবিধাভোগী শ্রেণির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে মূল আন্দোলনের কর্মসূচি ধ্বংস করে ফেলা হয়।
অ্যাডভোকেট দিপু বলেন, আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে অনেকগুলো পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর। একটি আন্দোলনের সফলতা আনতে সংগঠনের সাংগঠনিক সক্ষমতা অনস্বীকার্য। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের চাহিদারও একটা প্রতিফলন ঘটে। এছাড়া, বাংলাদেশে ভারত-মার্কিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো জোট বা শক্তিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব বিষয়ের সমন্বয় হলে এবং সাম্প্রতিক সময়ের ভারতের পালাবদল প্রেক্ষাপটে দেশে ৫ জানুয়ারির আগের পরিবেশ তৈরি করা গেলে হয়ত বিএনপির আন্দোলনে সফল হতে পারে।
তিনি মন্তব্য করেন, এমনিতেই বর্তমান প্রেক্ষিতে সরকারের ওপর ৮০ ভাগ সাধারণ মানুষের কোন আস্থা নেই। মানুষের এই নেতিবাচক মনোভাব অতীতে কোন সরকারকেই মোকাবেলা করতে হয়নি। তাই কিছু গণমুখি কর্মসূচি দিলেই বিএনপির বর্তমান দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
জামায়াত-বিএনপির জোটবদ্ধ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াতের আন্দোলন কৌশল, পুলিশ মারা তো বিএনপির কৌশল নয়। কিন্তু এর সঙ্গেও জনভিত্তি আছে। যার সুবিধা বিএনপি নিতে পারে। সরকারি বাহিনীকে গুলি করা যেমন অপরাধ, তেমনি বিনা উস্কানিতে পুলিশ গুলি করবে আর আমরা নীরবে তা হজম করব, এটাও তো হতে পারে না।
কিন্তু যখন আমি উকিলদের একটা মিছিল নিয়েও বের হতে চাই, পুলিশ বাধাদেয়, গুলি করে তবে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। কারণ এ ধরনের ঘটনা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
সর্বশেষ জানে চেয়ে ছিলাম কেমন আছেন দিপু ভাই ? উত্তরে তিনি বলেন, কেমন আর থাকবো? সবাই আপনারা দেখেন, জনগন দেখে। ভারসাম্যহীন সমাজ কখনো জনগণের ভালো থাকার নিশ্চয়তা দেয় না।