“শিক্ষিত ডাক্তাদের অশিক্ষিত চিকিৎসা চাই না” কিম্বা “নার্সদের মডেলিং নয়, সেবা চাই” – প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে এমন নানা বক্তব্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজপথে দাড়ায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত কলেজছাত্র রিফাত হাসানের সহপাঠীরা।
রিফাতের সহপাঠীদের অভিযোগ বাগেরহাট সদর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার অভাবে মৃত্য হয় তাদের প্রিয় বন্ধুর।
দুপুরে বাগেরহাট কেন্দ্র শহীদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসুচি থেকে এ অভিযোগ জানায় বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর কয়েক শত শিক্ষাথীরা।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় তাদের সহপাঠি রিফাতকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে চিকিৎসক, অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে রিফাতসহ ৩ বন্ধুকে নিয়ে যাবার প্রায় আধা ঘন্টা পরে আসে চিকিৎসক।
এমনকি রিফাতকে চিকিৎসার জন্য খুলনায় নিতে হাসাপতালের এ্যাম্বুলেন্সও পাওয়ায়া নি। হাসপাতালে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে থাকলেও পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে খুলনায় নিতে হয়। সেখানে তার মৃত্য হয়।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনাগ্রহ, এ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলে শিক্ষাথীরা তাদের বন্ধুর মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তপক্ষের গাফেলতি দায়ি করে।
তারা বলেন, দূর্ঘটনা সব সময় অনাঙ্খিত। তবে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বলে কেউ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে কেন?
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, নিহত রিফাতের সহপাঠি আকিব নূর দুর্জয়, রাফসান আমিন, মুন্না হাসান, আব্দুল্লা আল আরাফাত, জিহাদুল ইসলাম, তৌফিক এলাহী, মাঞ্জুরুল ইসলাম, এ বি এম আরিফ প্রমুখ।
এর আগে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী সরকারি পিসি (আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়) কলেজ থেকে একটি শোক র্যালি বের করে রিফাতের বন্ধু, সহপাঠী এবং কলেলেজের শিক্ষার্থীরা।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. বাকির হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, আহত অবস্থায় ৩ জন শিক্ষার্থী বাগেরহাট সদর হাসপাতালে যাওয়ার পর দুইজনকে ভর্তি ও একজনকে চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ডা. মো. বাকির হোসেন আরো জানান, পিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৭ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত রিপোর্টে কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মো. বাকির হোসেন।
উল্লেখ, গত মঙ্গলবার বিকালে বাগেরহাট শহরের আমলাপাড়া এলাকায় দু’টি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজছাত্র রিফাত (১৬) নিহত এব তার আরো দুই বন্ধু আহত হয়।
নিহত রিফাত হাসান বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং শহরের হরিণখানা এলাকার মুনসুর আলীর ছেলে।
ওই দূর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী সরকারি পিসি কলেজের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জিতু মল্লিক (১৬) এবং একই কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিব জামান (১৬) বর্তমানে খুলনার দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।