নদী থেকে স্থানীয়দের তোলা এ তেল খুলনার পদ্মা ওয়েল ডিপো কিনে নিতে বাধ্য থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভা থেকে।
তিনদিন ধরে স্থানীয়রা নদী থেকে তেল তুলবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে আসা নৌবাহিনীর জাহাজ কাণ্ডারি-১০ অবশিষ্ট ভাসমান তেল অপসারণ ও তেলের দূষণ কমাতে অয়েল স্পিল ডিস্পারস্যান্ট স্প্রে করবে নদীর পানিতে।
মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার্ড মাস্টার এ কে এম আক্তারুজ্জামান জানান, সনাতন পদ্ধতিতে নদীতে ছড়িয়ে থাকা তেল তুলবে স্থানীয়রা।
এ তেল তোলার জন্য তাদের লাগবে- ফোম, ডিঙি নৌকা, কলাগাছের বাঁষটা (পাতা ও কাণ্ডের শুকনো অংশ), বাঁশের চটা, নেটজাল (রেনুপোণা ধরার জাল), তেল রাখার জন্য ছোট পাত্র।
এদিকে, নদীতে ছড়িয়ে থাকা সিংহভাগ তেল বাতাস ও স্রোতে ইতোমধ্যে নদীরকূলে চলে এসেছে। এই তেল নদীর পাড় থেকেই নেটজাল দিয়ে তুলে তা পাত্রে রাখা হবে। আর নদীর মাঝ বা দূরে যে তেল রয়েছে তা ডিঙি নৌকায় সেখানে গিয়ে তোলা হবে।
তেলের দূষণ কমাতে রওয়ানা দেওয়া কাণ্ডারি-১০ জাহাজটি ইতোমধ্যে সুন্দরববনের আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।
সভা থেকে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর ভেতর দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়। তবে, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে মংলা বন্দরের নৌযান চলাচলকারী পশুর চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকারের সভাপতিত্বে সভায় মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হোসেন চৌধরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার বাগেরহাট ইনফোকে জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের একটি পাওয়ার প্লান্টের জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে যাওয়ার সময় সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে যাত্রাবিরতিকালে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ একটি ট্যাঙ্কার এমটি টোটাল ধাক্কা দেয়। এতে ট্যাঙ্কারটি ডুবে যায়।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে ৩ দিনে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেলবাহী ট্যাঙ্কারটি থেকে তেল ছড়িছে সুন্দরবনসহ আসপাশের প্রায় ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায়। ফলে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া মংলার মেসার্স খানজাহান আলী স্যালভেজ’র ডুবরি দল ডুবন্ত ট্যাঙ্কারের সঙ্গে লোহার তার পেঁচিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবুল কালাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তাদের বার্জ (উদ্ধারকারী নৌযান) বিডি রাইজিং ট্যাঙ্কারটি উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে এটি মংলার জয়মনিরঘোল এলাকায় রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর থেকে ট্যাঙ্কারটি তুলতে বিআইডব্লিউটিএ’র দু’টি উদ্ধারকারী জাহাজ আসার কথা থাকলেও এখনও দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। ডুবুরিদের অনেক চেষ্টা ও তল্লাশিতেও কোনো খোঁজ মেলেনি ট্যাঙ্কারের নিখোঁজ মাস্টার মোকলেসুর রহমানের।