পূর্ব সুন্দরবনে প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকার নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি বনবিভাগের উদ্যোগ অব্যাহত থাকছে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বন থেকে তেল অপসারণে শনিবার সকাল থেকে দৈনিক ভিত্তিতে বনবিভাগের ২০০জন শ্রমিক কাজ শুরু করেছ। ১০০টি নৌকা-ট্রলার নিয়ে তারা শ্যালা নদী সংলগ্ন বনের ছোট-বড় খাল থেকে তেল এবং তেল লেগে থাকা কচুড়িপানা, ডাল-পালা সংগ্রহ করছে।
শ্রমিকরা চাঁদপাই রেঞ্জের জয়মণি থেকে হরিণটানা পর্যন্ত কচুরি পানা, গাছের ডালপালা এবং নদীর বিভিন্ন ময়লা আবর্জনায় যেসব তেল জড়িয়েছে সেইগুলো অপসারণে কাজ করছে।
এছাড়া জোয়ারের সময় শ্যালা নদীর মৃগমারী এবং বাদামতলা এলকায় বাঁশ ও জাল দিয়ে ভেসে আসা তেল আটকে তা অপসারণ করা হয়েছে।
এসিএফ বেলায়েত হোসেন আরো জানান, সারাদিন নদীর দু’তীরের মাটি এবং গাছের শ্বাসমূলে লেগে থাকা তেল অপসারণেও কাজ করেছে বন বিভাগ নিয়োজিত শ্রমিকরা। এভাবে সংগ্রহ করা তেল এবং তেল যুক্ত কচুরিপানা, পাতা ও লতাগুল্ম নৌকায় করে তীরে এনে মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত নদী খালে তেল থকাবে এভাবে তাদের তেল অপসারণ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
চাঁদপাই ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পানি থেকে তেল সরানো গেলে এরপর বনভূমির অংশে থেকে তেল সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে, গত দু’দিনে সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ২৩ হাজার ২০০ লিটার (১১৬ ব্যারেল) তেল সংগ্রহ করে পদ্মা অয়েলের কাছে বিক্রি করেছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন বন ও সব সংলগ্ন জয়মনিসহ কয়েকটি এলকা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ছোট শিশুরা থেকে শুরু করে পরিবারের প্রবীণ সদস্য সবই তেল সংগ্রহ করছেন। অবশ্য ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার পর এখানকার অধিক অংশ জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়ায় সবাই ঝুঁকেছে তেল সংগ্রহে।
মঙ্গলবার ভোরে রাষ্ট্রায়ত্ব খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সুন্দরবনে যাত্রাবিরতিকালে দুর্ঘটনায় পড়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামে ট্যাঙ্কার।
এমটি টোটাল নামে অপর একটি ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারটির এক পাশ ফেটে যায় এবং শ্যালা নদীতে ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারটি উদ্ধার করা হয়।
দুর্ঘটনার ফলে বনের জীববৈচিত্র্য এবং বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী-শুশুক ডলফিন হুমকি মুখে পড়তে পারে বলে পরিবেশবিদ ও বন্য প্রাণী গবেষকদের ধারণা।