আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত খনন করে পূণর্জীবিত করা এবং মংলা বন্দর ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন।
৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌপথটি দ্রুত খনন করে চালুর নির্দেশ দেন। এর পর এ দাবিতে সোচ্ছার হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রাও।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), মংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটি, রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বনয় কমিটি, সার্বিক মানব উন্নয়ন সংগঠন কারিতাস, আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কাস পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌ বাণিজ্য প্রটোকলভুক্ত নৌপথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার অংশে অন্তত ৫০টি শাখা খাল রয়েছে। এইসব খাল এখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা দখল করে আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছে।
যার ফলে এই নৌপথটিতে যে গতিতে পানি আসে সেই গতিতে নামতে পারেনা। ফলে জোয়ারের পানির সঙ্গে আসা পলিমাটি আটকে যাচ্ছে। এই কারনে নদী দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
মানুষ্য সৃষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে এই নৌরুটি আজ সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মানববন্ধ থেকে বক্তারা বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে নৌপথটি নৌযান চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়ে। ইতিপূর্বে এই চ্যানেলে দেশ-বিদেশের ভারী জাহাজ, ষ্টিমার, কর্গো, রকেটসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। ব্যবসা প্রসার ঘটে, সচল হয় মংলা বন্দর।
নৌপথটি বন্ধ হওয়ার পর পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বার্জ সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা ও পশুর নদী দিয়ে চলাচল করছে।
সরকার ওই সময়ে যদি এই নৌপথটি খনন করার উদ্যোগ গ্রহণ করত তাহলে আজ সুন্দরবনে তেলের ট্যাংকার ডুবতো না বলেও বক্তারা অভিযোগ করেন। সুন্দরবনের নদী খালে তেল ভেসে জীববৈচিত্র ও জলজপ্রাণী আজ হুমকির মূখে পড়েছে।
সরকার মংলা বন্দরের প্রধান নৌপথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটিকে খননের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেই খনন কাজ দ্রুত শেষ করে নৌপথটি পূর্নজ্জীবিত করার দাবি জানান বক্তারা।
বাগেরহাট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সাংসদ হাবিবুন নাহার, মংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক শেখ মহিউদ্দিন, পেড়িখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম বাবুলসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।
বিআইডাব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নিজস্ব পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নদী খনন কাজ শুরু করে। আমরা মোট এগারো কিলোমিটার খনন করবো। বাকি ১১ কিলোমিটারের খনন কাজ দরপত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে। ওই এগারো কিলোমিটারের মধ্যে ৬ কিলোমিটারের খনন কাজ পেয়েছে ‘চায়না হারবার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা খুব শিগগির কাজ শুরু করবে বলে তিনি আশাবাদ জানন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাজ নিয়মিত চলছে। ১১ কিলোমিটারের মধ্যে গত সাড়ে ৪ মাসে আমরা প্রায় চার কিলোমিটার অংশ খনন কাজ শেষ করেছি। দ্রুত বাকি কাজ শেষ হবে।
সুন্দরবন বাচাঁও আন্দোলন কমিটির ক্ষোভ
শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় পরিবেশ বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ জানতে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে খুলনার ‘সুন্দরবন বাচাও আন্দোলন কমিটি’।
পরিদর্শন শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মংলা-ঘসিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত পুনখনন ও সুন্দরবনের মধ্যদিয়ে যাতে নৌ চলাচল করতে না পারে সেজন্য জনসচেতনা সৃষ্টি এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য খুলনাবাসী আন্দোলন শুরু করেছে।
সুন্দরবনের পাশে রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাইলোসহ কোন ধরণের স্থাপনা যাতে না করা হয় সেজন্য খুলনাবাসী এ আন্দোলনের সাথে দেশবাসীও একাত্ব ঘোষণা করবে ।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গঠিত ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার সুন্দরবন পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪:: স্টাফ ও স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।