চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি। বাজছে ঢাক, বাজছে ঢোল। বরশিতে ঝুলে থাকা মানুটি আবার তার সাথে থাকা ফুল-জল, বাতসা-নকুলদানা ইত্যাদি প্রসাদ ছিটিয়ে দিচ্ছেন অগনিত ভক্ত/দর্শকদের উদ্দেশ্যে।
ভক্তরা তা নিয়ে মহাভক্তি ভরে দেব আদি দেব মহাদেবের নাম জপ করছেন। সকলেই বিষ্মিত, বিমোহিত। রুদ্ধশ্বাসে ভংকর এ দৃশ্য দেখে শিশু-যুবা-বুদ্ধ যেন মুগ্ধ।
অন্তত ২০-২৫ ফুট লম্বা একটি কাঠ। যা মাঠের মধ্যখানে পোতা। অনেকটা লাঙ্গলের জোয়ালের মত আরেকটি কাঠ এই কাঠের ওপর লম্বালম্বিভাবে বসানো হয়। আর কাঠের মাথায় থাকে মাটি পর্যন্ত এক গাছ লম্বা দড়ি। দড়ির একপ্রান্তে একদল মানুষের শক্ত হাত আর অপর প্রান্তে থাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর সেই দৃশ্য।
এটাই চড়ক মেলার উৎসবের মূল আকর্ষণ।
বাগেরহাটে ইসকনের প্রধান উপদেষ্টা বাবুল সরদার এর সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা। অনুষ্ঠানে অনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস. এম মাহফুজুর রহমান, প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বেবী মোর্শেদা খানম, রাঢ়িপাড়া মন্দির কমিটির সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তুু, কচুয়া থানার ওসি শমশের আলী প্রমুখ।
চৈত্র সংক্রান্তির এ উৎসবটি এ শিববাড়ি গত ছয়’শ বছর ধরে এভাবেই হাজার হাজার ভক্ত-দর্শনার্থীর অংশ গ্রহনে পালিত হয়ে আসছে।
চড়ক পুজার উৎসবে আসা বাসুদেব সাহা জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই চড়ক উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। ধর্মানুরাগী সন্ন্যাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৃত্যগীতের মাধ্যমে চড়ক পূজার জন্য ভিক্ষা সংগ্রহ করেন।
এরমধ্যে একদিন চলে উপবাস ও রাতে নিরামিষ ভোজ। চড়ক পূজার দু’দিন আগে হয় শ্মশান পূজা ও গৌরীর বিয়ে। গৌরীর নাচ, গান আর ঢাকের বাদ্যে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পরদিন হয় কালীনাচ।
এরপর শুরু হয় মূল আকর্ষণ শরীরে বড়শি বিধিয়ে শূন্যে ঘোরা। যারা শরীরে বড়শি বিধিয়ে শূন্যে ঘোরেন তাদের ‘হাজরা’ বলা হয়।