তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবনে ফের জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ মাসের মাথায় এবার সার নিয়ে কার্গো জাহাজ ডুবেছে পূর্ব সুন্দরবনে অন্য অংশে।
মঙ্গলবার (০৫ মে) বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জাহাজটিতে প্রায় ৫শ’ মেট্রিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার ছিলো বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এদিকে, জোয়ার-ভাটার সাথে পটাশিয়াম জাতীয় এ রাসায়নিক সার ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেজ্ঞরা।
বনবিভাগ জানায়, দুর্ঘটনা কবলিত মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইন্সের (এম-৬৯৪৩) এমভি জাভালে নূর নামে সারবাহী কার্গো জাহাজটি গত রবিবার (০৩ মে) সকালে মংলা বন্দরের হারবাড়িয়া থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথে সুন্দরবনের ভেতরে ওই এলাকায় একটি ডুবো চরে আটকা পড়ে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ডুবো চরে আটকে পড়া কার্গো জাহাজটি উদ্ধারে মঙ্গলবার সকালে মালিক পক্ষ দু’টি কার্গো নিয়ে সুন্দরবনের ওই এলাকায় আসে। উদ্ধারচেষ্টার এক পর্যায়ে আটকে পড়া কার্গোটির তলা ফেটে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাগেরহাটের শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, কার্গো জাহাজটি ৬শ’ ৭০ মেট্রিক টন এমওপি সার ছিল বলে শুনেছি।
সার বোঝাই জাহাজ ডুবির এলাকা ডলফিন ও শুশুকের বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায়, সুন্দরবন আবারও মারাত্মক বির্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনা সুন্দরবনের বায়ো ডাইভারসিটির (বাস্তুসংস্থান) উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তাৎক্ষণিক না হলেও পুরো পরিবেশের উপর দীর্ঘ মেয়াদে বড় প্রভাব দেখা যাবে। সুন্দরবনের মৎস সম্পদ এবং শ্বাসমূল ও জলজ প্রাণী স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি।
পানি লাগাতে জাহাজে থাকা সার সম্পূর্ণ গলে গিয়ে বনের ভেতরের নদী-খালের পানিতে মিশে যাবে। এর ফলে পানিতে মাছের বেঁচে থাকার পরিবেশ ধ্বংস হবে বলে মন্তব্য করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিনেট সদস্য।
পানিতে মিশে যাওয়ার আগে সার তুলে আনতে না পারলে এ দূষণের ক্ষতি এড়ানো যাবে না। তেলেও চেয়ে এ রাসায়নিক সার সুন্দরবনের জন্য বেশি ক্ষতিকর হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ডুবে যাওয়া পটাশ (এমওপি) জাতীয় এ সারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বলে তাকে মালিক পক্ষ জানিয়েছে। তবে গলিত সার পানিতে ফেলা হলে জাহাজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিক বাবুল হাওলাদার জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে জানালেও, উদ্ধারে আসা এমভি নুরুল হকের মাস্টার জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে বিশাল চর থাকায় ওই জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই তারা সেখান থেকে ফিরে যাবেন।
এর প্রেক্ষিতে গঠিত দেশি ও জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছিল।