সড়কে হাটু পানি, কারো তলিয়েছে ঘর, কারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কোন এলকায় সরকারি অফিস, কোথাও মাছের ঘের। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে এমন দূর্বিসহ ভোগান্তিতে পড়েছে বাগেহরাটবাসী।
বাগেরহাট শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক, সবখানেই এখন কেবই পানি। মাত্র তিন দিনের ভারী বষ্টিপাতে শহর জুড়ে তৈরি হয়েছে এমন অবস্থা।
অবিরাম বর্ষণ আর জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলা সদরের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর হাটু পানি জমে গেছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং পনিবন্দি মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং সরকারি খালগুলো ভরাট ও দখল হওয়াতে বৃষ্টির পানি সরতে পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
** রামপালে আকষ্মিক ঝড়ে ৪০টি বসত ঘর বিধ্বস্থ
** ভারী বর্ষণ: জলাবদ্ধ বাগেরহাটে ভোগান্তি চরমে
** ভারী বর্ষণে মংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা ব্যাহত
প্রায় একই অবস্থা জেলার মংলা, কচুয়া, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হলে রাস্তাঘাটে পানি জমতে থাকে। স্বাভাবিক যান চলাচল করতে পারছে না। অনেক পরিবারে রান্না-বান্না বন্ধ হয়েছে।
শহরের কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারী অফিসের নিচতলায় পানি ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পৌর শহরের খারদ্বার আশ্রয় নিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় বেশ কিছু পনিবন্দি মানুষ।
বিভিন্ন এলাকায় ভুক্তভোগিরা জানান, পানি উঠে ঘরের ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাব নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টির পানি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। খাটের নিচে পানি। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
অন্যদিকে জেলা সদরের ভৈরব নদীর ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে রুপসা-বাগেরহাট পুরাতন সড়ক। বৃহস্পতিবার যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন মুচিঘাট এলাকায় ভেঙেছে আরো কিছু অংশ। মূল সড়কে ভাঙন দেখা দেওয়ায় স্থানটিতে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে কর্তিপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির আরো বেড়ে যাওয়ায় শহরের পৌরসভা রোড, খারদ্বার, বাসাবাটি, সাহাপাড়া, মিঠাপুকুর পাড়, পুরতন বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর প্রায় হাটু পানি জমে যায়।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধার পর থেকে বৃষ্টি কমলেও রাত ২টা পর্যন্ত সড়ক থেকে পানির চাপ কমেনি। বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তখন পর্যন্ত জলমগ্ন অবস্থাই ছিলো।
শহরের স্টেডিয়াম রোডের বাসিন্দা উন্নয়ন কর্মী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নদীতে ভাটার সময়ও শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাটু পানি। অব্যবস্থাপনার করণে বাগেরহাট জলমগ্ন শহরে পরিনত হয়েছে।
পানি উঠে ঘরের ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাবও এখন নষ্ট হবার উপক্রম বলে জানান তিনি।
বাগেরহাটের নতুন জেলখানা রোডের বাসিন্দা সাকিব শিকদার বলেন, বৃষ্টির পানিতে ঘর এবং রান্না ঘর থৈ থৈ করছে। স্থানীয় কাউন্সিলারের দেওয়া চিড়া ও গুড় খেয়ে রোজা রেখেছি। এখনও পানি কমেনি। কিভাবে পরের দিন যাবে তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।
বাগেরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র তালুকদার এ বাকী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারনে এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে পানি নিস্কাশনে কাজ করে যাচ্ছি।
ভারী বর্ষণে সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, বেমরতা, গোটাপাড়া, বিষ্ণুপুর, বারুইপাড়া, ষাটগুম্বুজ, খানপুর, রাখালগাছী ও ডেমা ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে সেখানকার শত শত বিঘার মৎস্য ঘেরের মাছ। প্রায় একই চিত্র জেলার অন্য ৮টি উপজেলাতেও।
ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা দেয়া হবে।