২৯ জুলাই, বুধবার বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়ায় বুধবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
‘বাঘ বাঁচলে বাঁচবে বন, রক্ষা হবে সুন্দরবন’ – স্লোগানকে সামনে রেখে বাঘ রক্ষায় জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচির মধ্যে বুধবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে এবারও সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা, মংলা, খুলনা ও সাতক্ষীরায় নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বনবিভাগ।
তবে যে বাঘ রক্ষায় এই দিবস- গত কয়েক দশকে সুন্দরবনে সেই বেঙ্গল টাইগারের (বাঘ/বাংলার বাঘ) সংখ্যা কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
এর আগে ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় বনবিভাগ বাঘের পায়ের ছাপ গুণে জরিপ করে বলেছিল সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। যদিও ২০১৩ সালে ক্যামেরা ট্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরুর পর ওই জরিপ কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে প্রশ্ন ওঠে।
বাঘ শুমারির চুড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ মিলে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা ১৭০টি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী মোবাইল ফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সুন্দরবনে মানুষের অবাধ বিচরণ, বন উজাড়, বাঘের আবাসস্থল সংকটসহ নানা কারণে বাঘের প্রজনন প্রাকৃতিক পরিবেশ হারাচ্ছে। বাঘের স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব কারণে বাঘের সংখ্যা কমে আসছে দিন দিন।
বাঘ শুমারির প্রধান ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহিদুল কবীর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের চার হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতি এবং পশ্চিম বন বিভাগে সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি, কৈখালী ও খুলনার নীলকমল, পাটকোস্ট, গেওয়াখালীতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র।
সদ্য প্রকাশিত শুমারির ফলাফলে বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ক্যামেরায় ছবি তুলে মোট ৩৮টি পূর্ণবয়স্ক ও চারটি বাচ্চা বাঘ সনাক্ত করা গেছে। ক্যামেরাবন্দি হওয়া বাঘগুলোর মধ্যে ৩০টি পুরুষ ও আটটি নারী। বাকি ৬৮টি বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে তাদের পায়ের ছাপ গুণে ও বিচরণের অন্যান্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে।
বাঘ দিবসের আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে বাঘ বাঁচাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সুন্দরবনে আশঙ্কাজনক হারে বাঘের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ আমাদের জাতীয় সম্পদ, আমাদের গর্ব। বাঘ বাঁচাতে হলে এখনই জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
বাংলাদেশে ২০১০ সালে ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ (ডব্লিউটিবি) সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সীগঞ্জে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়।