এবারের বর্ষায় বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে বাগেরহাটের অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমির বীজতলা ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২ শ’ বিঘা জমির আমন ধানের বীজতলা এবং প্রায় সাড়ে ৮শ’ বিঘা জমির সবজি ক্ষত। এছাড়া শতাধিক হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এ অবস্থায় ফসল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন শত শত প্রান্তিক চাষি। চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হবার আশংকা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী বীজতলা, সবজী ক্ষেত ও পান বরজ নষ্ট হয়ে বাগেরহাটে চাষিদের প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাঠের পানি সরে যাবার পর এই ক্ষতি আরও বাড়তে পারে বলে তারা আশংকা করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটসহ পার্শ্ববর্তি খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় সবজীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় আরও কিছুদিন বাগেরহাটের সবজী বাজার চড়া থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশী হচ্ছে। এর মধ্যে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত বাগেরহাটে তিন দফা ভারী ও টানা বৃষ্টিপাত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ৭ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত জেলায় ২৭৭ মিলি মিটার, ২০ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫৯ মিলি মিটার এবং ২৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে ১৩৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ১০৭ হেক্টর (এক হেক্টর সমান সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে কৃষক আমন বীজতলা করেছিলেন। এর মধ্যে তিন দফা বৃষ্টিতে তিনশ‘ হেক্টর বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। মোট তিন হাজার ৩৬৫ হেক্টর সবজী ক্ষেতের মধ্যে এক শত হেক্টর (সাড়ে সাত শত বিঘা) সবজী ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।
এ ছাড়া স্থানীয় কৃষকের অন্যতম প্রধান ফসল পান বরজের ক্ষতি হয়েছে অন্তত শতাধিক হেক্টর। জেলায় পান বরজের আওতায় মোট জমির পরিমাণ এক হাজার ৬৫ হেক্টর।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার সবজি চাষি আবুল কালাম বলেন, তিনি তার জমিতে করলা, লাউ, শসা, কুমড়া, বরবটি, কাকরোল, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করেছিলেন। এ জন্য তিনি স্থানীয় এনজিও থেকে কিছু ঋণও করেছিলেন।
এদিকে বাগেরহাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জুন মাসের তুলনায় বাজারে বেগুন, পিয়াজ, ঢেড়শ, কাঁচা মরিচ, বরবটি, কচুর লতি, সবুজ ও লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজীর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
শহীদুল নামে বাগেরহাট বাজারের এক শবজী বিক্রেতা বলেন, ‘খুলনা ও বাগেরহাটের আড়তে মাল নাই। টাকা দিলেও মাল মেলে না। এভাবে চললে দাম আরও বাড়বো।‘
তবে বাগেরহাট বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরদার ফখরুল আলম সাহেব মনে করেন, শবজীর দাম আপাতত আর বাড়বে না। নতুন সবজী না আসা পর্যন্ত যশোর অঞ্চলের উঁচু জমির উৎপাদিত সবজী এই এলাকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারবে।
এর ফলে একদিকে যেমন অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অন্যদিকে সবজী বাজারও চড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন যে হিসাব পাচ্ছি তা প্রাথমিক। এখন পর্যন্ত আমরা এই তিনটি ফসলে (ধান, সবজী ও পান) কৃষকের প্রায় তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি নিরুপন করেছি। মাঠ থেকে পানি সরে গেলে ধানের বীজতলা, সবজী ও পানের বরজে ক্ষতি আরও বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে কৃষকের আর্থিক ক্ষতিও।’