দু’দিন আগেও যেখানে ছিলো পাকা রাস্তা, চলতো যানবাহন, আজ সেই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে নৌকা আর ট্রলারে।
পানগুছি নদীর আকস্মিক ভাঙনে রাস্তা বিলীন হওয়াতে এমন অবস্থা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার চালতাবুনিয়া এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, পানগুছি’র ভাঙনে উপজেলার এই অংশে নদী তীরের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙেছে কয়েক বছর আগেই। এর পর থেকে একটি বিকল্প রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে পানগুছির আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়েছে আশপাশের কয়েকটি বসতঘরসহ চলাচলের সেই পথও।
ফলে মোরেলগঞ্জের সঙ্গে উপজেলার সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, বানিয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
চালতাবুনিয়া উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পানগুছি নদী। নদীর তীর ধরে পিচঢালা ও ইট বিছানো পাকা রাস্তা। ঢাকা থেকে আসা স্টিমার ভেড়ে সন্ন্যাসী বাজারের কাছে। এসব কারণে এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামের আব্দুল গফ্ফার তালুকদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, এ পথে যাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা শরণখোলায়। এক সময় বাসও চলতো এই পথে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে নদী তীরের এই অংশ ভাঙতে শুরু করে। এর পর গত কয়েক বছরে এই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় ট্রলার চালক লুৎফর শিকদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সোমবার সকাল ৮টার দিকে সড়কের একটি অংশ বেশ কিছুটা বসে (ডেবে) যায়। সোয়া ৯টার দিকে রাস্তার ওই অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে ভরসা নৌকা আর ট্রলার। সবাই তাতে করেই রাস্তা পার হচ্ছে। কোনো ঘাট না থাকায় পারাপারে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
সোমবারের ভাঙনে প্রায় তিনশ’ মিটার রাস্তা ছাড়াও বিলীন হয়েছে তিনটি বসতঘর ও ভিটা।
ভাঙনে ঘর হারানো সামছু তালুকদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সোমবার ভোর রাত থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আমার চার কাঠা জমিসহ বসতঘর সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক ভাঙনের শুরু হওয়ায় তেমন কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ঘরের চালও (ছাউনি) নদীতে ভেসে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছি।
স্থানীয় সাংবাদিক জামাল হোসেন বাপ্পা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, বর্ষার জোয়ারের সময় ওই অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ঘর ডুবে থাকে পানিতে। বেশি প্লাবিত হয় ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, চালিতাবুনিয়া, মিশানবাড়িয়া আর খাউলিয়া গ্রাম। বেড়িবাঁধ না থাকলেও এলজিইডির ৬ ফুট উঁচু এই রাস্তা ঠিক থাকলেও অন্তত গ্রাম গুলোতে স্বাভাবিক অবস্থায় পানি প্রবেশ করতো না।
উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন শেখ ক্ষোভের সঙ্গে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এমন একটা দেশে আছি, রাস্তা পার হইতে হয় নৌকা আর ট্রলার দিয়া।
দ্রুত এই পথটি চলাচল উপযুগী করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পানগুছি নদীর ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।