সিডর বিধ্বস্ত প্রান্তিক জনপদ ঘুরে, ইনজামামুল হক । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় সিডরের মুলকেন্দ্রস্থল (আই) আঘাতহানে বলেশ্বর নদী তীরবর্তী বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালীতে। সুন্দরবন সংলগ্ন এই উপজেলায় প্রাণ হারান হাজারেরও বেশি মানুষ।
সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, সিডরে তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী লোক মারা গেছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয় সবচেয়ে বেশি। ত্রান-সহায়তা ছাড়া এই জনপদের মানুষের ঘুরে দাড়ানো অসম্ভব ছিলো। তবে ঝড়ের পর পরই দুর্গত মানুষের পাশে সবাই যে ভাবে এগিয়ে এসে ছিলো শুধু ঝড় নয় ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলো এই এলাকার মানুষ।
মোজাম্মেল হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমজকে বলেন, তার এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ জেলে এবং সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। এক দিন মাছ ধরা কিম্বা বনে যেতে না পরলে অনাহারে থাকতে হয় তাদের। ঝড়ের পর দেশি-বিদেশি সাহায্য দেখে মনে হয়েছিলো হয়তো এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।
তিনি নিজেও সাগরে মাছ ধরেন। সময় সময়ে সাগরে ডাকাতের চাপ বাড়ে। তখন বাড়ির পাশের বলেশ্বর নদী মাছ ধরছেন। নদীতে যে দিন মাছ না পাওয়া যায় সে দিন ধারদেনা করে চলতে হয় বলে জানান তিনি।
আবু বক্কর বলেন, ‘এদিকে (এলাকায়) কামকাজ কিছু নেই। ইনমাকের অন্য কোন সোর্স থাকলে তো এ দিক (নদীতে) আইতাম না। সাগরে গেলি ডাকাইতে পিটায়, বোনে (সুন্দরবন) গেলি স্যারেরা। আমরা তো না পারতি জাল লইয়ে নামি। কাজ থাকলে কি আর গাং এ আই তাম?’
সিডরে স্বামী হারা লাইলি বেগমও (৪৮) তার এক মাত্র ছেলে লিটন ঘরামিকে অভাবের সংসার চালাতে জাল নিয়ে নদীতে পাঠান। তিনি বলেন, ‘আম-গো জীবণ তো জাল-জলায় বাইন্দা গ্যাছে। আর কি কোন কাম-ক্যাইজ আছে দ্যাশে, যেন তা করবে। প্রথমে স্বামীর আনা দাদন (মাহাজনের কাছ থেকে আনা লোন) শোধ করতে পোলাডারে গাংএ পাঠাই। এখন প্যাডের দায় যায়।’
সাউথখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, অনেক ত্রান এসেছে এই এলাকায়। সবই গেছে, কিন্তু কাজের কাজ কি হইছে। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক লোকটি ত্রান পায়নি। এখন মানুষ কাজের অভাবে এলাকা ছাড়ছে।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এই এলাকার মানুষ বেশির ভাগই নদী-সাগর ও সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। এই সব পেশাজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা এখন সবচেয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উন্মেষের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এই অঞ্চলেন মানুষ এক প্রকার দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। জেলেদের অগ্রীম লোন বা দাদন দিয়ে মহাজনরা জিম্মি করে ফেলে। কেউ কে পেটের দায় আবার কেউ কে দাদন শোধ করতে নদী আর সাগরেই যেতে হচ্ছে।
পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ছাড়া এই অবস্থার পরিবর্তন কঠিন। তাই এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান তার।
⇒ নেই পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র: ঝুঁকিতে উপকূলবাসী
⇒ ‘সিডর শিশুরা’ বেড়ে উঠছে মানসিক ব্যাধি নিয়ে!
⇒ কাজের খোঁজে উপকূলে বাড়ছে শহরমুখীতা
⇒ সিডরের ৯ বছরেও হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ
⇒ উপকূলের বিভীষিকা সিডর !
এইচ/এসআই/বিআই/২০ নভেম্বর, ২০১৬