সরদার ইনজামামুল হক, নিউজ এডিটর । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
তাদের প্রত্যেকেরই টানাপোড়েনের সংসার। স্বামীর একার রোজগারে এদিক হলে টান পড়ে ওদিকে। এমনি চলছিল অনেকদিন।
তবে সম্প্রতি আর্থিক দৈন্য কাটিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন বাগেরহাটের জনা চল্লিশেক নারী। তাদের চোখে অমিত স্বপ্ন, নিজের ক্ষুদ্র চেষ্টায় একসময় দূর হবে সংসারের অভাব, আসবে শান্তি।
বলা হচ্ছে বাগেরহাট বাজার সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধ এলাকার ৪০ নারীর কথা। নিজের উদ্যোগে মাটির চুলা তৈরি, পরে তা বিক্রি করে সংসারে সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন বুনছেন এসব নারীরা।
সেখানে গিয়ে জানা গেলো, নদী থেকে তোলা পলিমাটি দিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মাটির চুলা তৈরি এখন তাদের পেশা। কোনো সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা বা কারো পরামর্শে নয়; সংসারের অনটন মেটাতে নিজেরাই স্বউদ্যোগী হয়ে বেছে নিয়েছেন এই অভিনব মুক্তির পথ।
পরিবার বা বৈবাহিক সূত্রে গ্রাম থেকে শহরে আসা দরিদ্র পরিবারের এসব নারীরা আগে থেকেই জানতেন মাটি দিয়ে চুলা তৈরির কৌশল। এখন সেই রপ্ত করা কৌশল আরও একটু ঝালিয়ে নিয়ে চুলার এক অস্থায়ী বাজারও গড়ে তুলেছেন তারা।
লঞ্চঘাট ও শহর রক্ষা বাঁধের পাশে বসবাস করা এসব নারী মৃৎ-শিল্পিরা কথা বলেছেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমের সাথে। তুলে ধরেছেন তাদের জীবন সংগ্রামের গল্প।
এ এলাকার দিনমজুর সালাম খাঁর স্ত্রী রেশমা বেগম (২৫) বলেন, স্বামীর একার আয়ে ঘর ভাড়ার টাকা দিয়ে দুই সন্তানসহ সংসারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে যায়। মেয়েটারে স্কুলে দিছিলাম, এবার ফাইবে (পঞ্চম) উঠছে। ওর তো মানুষ করতে হবে। অভাবের সংসার, তার (স্বামী) আয়ে সব খরচ কি করে চলে?
রেশমার সঙ্গে আলাপ সেরে নদী পড়ে সাজিয়ে রাখা চুলার ছবি তোলার সময় মধ্য বয়সী এক নারী ডেকে বললেন, ‘বাবা, চুলোর ছবি তুলে কি হবে? কতো জনে তো ছবি তুলে, আমাগো জ্বালা কি কমে!’
জোবেদা বেগম (৪৮) নামে ওই নারী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘দুই বছর আগে স্বামী মারা গেছে। বড় ছেলেডারে অনেক কষ্টে বি.এ. পাশ করাইছি। কোথাও একটা চাকরি পায়না। সবখানে ঘুষ লাগে। সামান্য বেতনে এখন একটা কম্পানির চাকরি পাইছে। ছোট ছেলেডারেও স্কুল থেকে ছাড়ায়ে এক দোকানে কাজে দিছি। অভাবের সংসারে প্রায় ৭ বছর ধরে এই চুলা বিক্রি করি।’
চুলা তৈরি করা করা আরও একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুকনা মৌসুমেই মূলত নদীর মাটি তুলে তা দিয়ে চুলা তৈরি করেন তারা। সবশেষে ওপরে কাঁদার প্রলেপ দেন। এরপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় চুলা।
শহরের যেসব পরিবার সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন না এমন বাসা-বাড়ির গৃহিণী ও হোস্টেলের ছাত্র-ছাত্রীরাও এ চুলার অন্যতম ক্রেতা বলে জানান তারা।
মাটির চুলার বাহারি নাম-
চুলার ধরণ ও আকৃতি ভেদে শুকনা মৌসুমে দেড়শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায় মেলে এক একটি চুলা।
বাগেরহাট নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষাকালে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। তখন চাহিদা বাড়ে সহজে বহন যোগ্য এসব চুলার। বর্ষার সময়ে তাই ৩০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় একটি মাটির চুলা।
এসআই-এইচ/বিআই/১৬ জুন, ২০১৬