প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় বাগেরহাট জেলার ৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ১৯টিতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।
আসছে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে জেলার ৩২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৯টি উপজেলায় ইউনিয়ন রয়েছে ৭৫টি। এরমধ্যে আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭৪টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। তবে ইউপি সদস্য পদে ভোট আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে হচ্ছে।
মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, জেলার ৭৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ২১৫ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৮টি দলের প্রার্থী ১৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তফসিল অনুযায়ী, বাছাইয়ের পর আগামী ২ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
অর্থাৎ এই ১৯টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চেয়ারম্যান পদে ভোট দিতে হবে কি না, তা সেদিনই চূড়ান্ত হবে। বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৫টিতে, চিতলমারীর ৭টি ইউনিয়নের ৫টিতে, মোল্লাহাটের ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে গাংনী ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে না, বাকি ৬টির ৪টিতে, ফকিরহাটের ৮টি ইউনিয়নের ২টিতে, রামপালের ১০টি ইউনিয়নের ১টিতে, মোরেলগঞ্জের ১৬টি ইউনিয়নের ১টিতে এবং মংলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ফলে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নে মনোয়ার হোসেন টগর, ডেমা ইউনিয়নে মো. মনি মল্লিক, যাত্রাপুর ইউনিয়নে এম এ মতিন, গোটাপাড়া ইউনিয়নে শেখ শমসের আলী ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে অ্যাড. শংকর পাল।
চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে সামিয়া রহমান বিউটি, হিজলা ইউনিয়নে মো. আজমীর কাজী, চরবানিয়রী ইউনিয়নে অশোক কুমার বড়াল, বড়বাড়িয়া ইউনিয়নে মো. মাসুদ সরদার ও কলাতলা ইউনিয়নে মতিয়ার রহমান শিকদার।
ফকিরহাট উপজেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে শিরিনা আক্তার কিসলু ও মূলঘর ইউনিয়নে অ্যাড. হিটলার গোলদার।
এছাড়া রামপাল উপজেলার মলিকেরবেড় ইউনিয়নে তালুকদার নাজমুল কবির ঝিলাম, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরন ইউনিয়নে আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার এবং মংলা উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নে নারজিনা বেগম।
নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ ৭৪টির মধ্যে সবকটি ইউনিয়নে, বিএনপি ৪২টিতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৭টিতে, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৪টিতে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টিতে এবং অন্য দল দু-একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু বলেন, “আমরা ৭৪টি ইউনিয়নের জন্যই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পথে তাদের আটকে দেয়।”
‘কিছু প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তারা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে, কাউকে কাউকে ভয়ভীতি দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়।’
এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যেসব ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেনি বলে অভিযোগ করছে সেসব ইউনিয়নে তাদের কোনো ভোট নেই। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি।’