বিশ্ব জুড়ে বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল হিসেবে সুখ্যাতি সুন্দরবনের। বাঘ এ বনের প্রধান প্রাণী। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বড় অংশই বাগেরহাট জেলার অর্ন্তগত।
কেউ কেউ মনে করেন সুন্দরবনের বাঘের আনাগোনা এ জনপদে এতোই বেশি ছিলো, এক কথায় এখানে হাট বসতো বাঘের! যা থেকে এসেছে ‘বাঘের হাট’ তথা ‘বাগেরহাট’ নাম।
আসলেই এখানে বাঘের হাট বসতো কী না তা ঠিক জানা যায় নি। তবে বাঘের আনাগোনা এ জনপদে বেশ ভালোই ছিলো। রাতে এমনকি দিনের আলোতেও লোকালয়ে দেখা মিলতো বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু বাঘের দেশ সুন্দরবনেই বাঘ এখন মারাত্মক হুমকিতে।
এরই মধ্যে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বাঘ রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে বিশালাকৃতির বাঘ গাড়ি (টাইগার ক্যারাভ্যান) নিয়ে দেশজুড়ে চলছে প্রচারাভিযান।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা ও সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে ‘বাঘ এসেছে’ শিরনামে একটি নাটিকা মঞ্চায়িত হয়।
সচেতনতামূলক এ নাটিকার মাধ্যমে সুন্দরবনের যেকোন এলাকায় বাঘ, বন্যপ্রাণী ও চোরাচালানীদের ধরিয়ে দিতে একটি হট-লাইন নম্বরও (০১৭৫৫ ৬৬০০৩৩) দেওয়া হয়।
নাটিকা শেষে বাঘ চোরাচালানীদের ধরিয়ে দিতে কী করণীয়, বাঘ হত্যা ও গাছ কাটা দেখলে কাদের জানাতে হবে, বাঘ সংরক্ষণে কি ধরনের আইন রয়েছে- প্রভৃতি বিষয়ে উপর প্রশ্ন করা হয়।
নাটক শেষে টাইগার ক্যারাভ্যানে সুন্দরবন পরিদর্শন, প্লেজবোর্ডে নিজ মত প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।
বাঘের দেশে বাঘকে স্বাগত জানিয়ে ডিএফও সাইদুল ইসলাম বলেন, বাঘ আমাদের গর্ব-বাঘ সুরক্ষা করব’- স্লোগানে টাইগার ক্যারাভ্যান সারা দেশে ১০০টি স্থানে গিয়ে সুন্দরবন ও বাঘ বিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। যার অংশ হিসেবে টিমটি বাগেরহাট এসেছে।
আগামী ৫দিন বাগেরহাটের সদর, ফকিরহাট ও মংলা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল এলাকায় পথনাটকসহ নানা আয়োজনে মানুষের মধ্যে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করবে এ ‘ক্যারাভ্যান’।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড ও বন বিভাগের যৌথ আয়োজনে এ প্রচারাভিযান বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংগঠন ওয়াইল্ড টিম।
জনসচেতনা সৃষ্টিতে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার, ও জনবহুল জায়গায় ৫দিন প্রদর্শনী শেষে টাইগার ক্যারাভ্যান খুলনা ও সাতক্ষীরা যাবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে এখন মাত্র ৩ হাজার ২০০ বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার আছে প্রায় ১০৬টি।
বাংলাদেশের বন বিভাগ ও ভারতের বন্য প্রাণী ইনস্টিটিউটের ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে চালানো যৌথ এক জরিপে সাম্প্রতিক বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের ওই সংখ্যা পাওয়া যায়।
পরবর্তিতে ২০০৪ সালের বন বিভাগ, ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ পাগমার্ক পদ্ধতির শুমারিতে ২১টি বাচ্চাসহ মোট ৪৪০টি বাঘ আছে বলে জানায়। এরপর ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপেও বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ সুন্দরবনে ৪০০ থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে ফলাফল প্রকাশ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ কমে যাওয়ার অর্থ হল, এ প্রাণীটির আবাসস্থল সঙ্কটে পড়েছে। তাই বাঘ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান তাদের।