প্রচ্ছদ / খবর / দ্বিতীয় দিনেও পুড়ছে সুন্দরবন

দ্বিতীয় দিনেও পুড়ছে সুন্দরবন

সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নাম্বার কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা এলাকায় লাগা আগুন ৩৩ ঘণ্টায়ও নেভেনি। এখনও ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছে এবং ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলা এলাকায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দিনভর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বনের এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছিল।

সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, এই এলাকার আগুন এখনও অনিয়ন্ত্রিতভাবেই জ্বলছে। সূত্রটি আরও বলছে, আগুন লাগার ৩০ ঘণ্টা পার হলেও সব এলাকায় পৌঁছাতেই পারেনি বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঘটনাস্থলের পশ্চিম পাশে এখনও পৌছাতে না পারায় ওই অংশে আগুন কতটা বিস্তৃত তাও বোঝা যাচ্ছে না।

এদিকে, রাতে আলোর স্বল্পতা ও অত্যধিক গরমের কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কাজ বন্ধ রেখেছে। শুক্রবার ভোর থেকে তারা আবারও আগুন নেভাতে কাজ শুরু করবে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. মানিকুজ্জামান বলেন, আগুন নেভাতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ করছে। ওই দিন রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ভোর থেকে আবারও কাজ শুরু করে তারা।

‘তীব্র গরম এবং পানির আধার দূরে হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’

সুন্দরবনে এবারের অগ্নিকাণ্ডের এলাকাটি বেশ দুর্গম উল্লেখ করে তিনি জানান, ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নাম্বার কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা এলাকায় আগুন নেভাতে তাদেরকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের আড়ুয়ারবাড় খাল থেকে পানি আনতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে এক নাগাড়ে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কিছুটা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এজন্য খুলনা ইউনিটের কাছে একটি দল চাওয়া হয়। ইতমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের খুলনা ইউনিটের কর্মীরাও এসেছে পৌঁছেছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের আগুনের বিস্তৃতি অনেক বেশি। বাতাসের কারণে এরই মধ্যে আগুন ওই এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। এজন্য নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ফলে শুক্রবারও সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হবে কি না- তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।

অবশ্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে, ঘটনাস্থলটি বেশ দুর্গম হওয়ায় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত দমকল কর্মীদের পক্ষে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ( সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ রাতে জানান, সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় এখনো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আলোর অভাবে রাতে আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে আবার কাজ শুরু হবে।

তবে সুন্দরবনের কতোটা এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়েছে বা আগুনে বনের কি ধরনের গাছপালা পুড়েছে সে বিষয়ে এখনওই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

এর আগে গত ২৭ মার্চ, ১৩ ও ১৮ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আগুন লাগে। সে সময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দায়ী করা হয়।

ওই ঘটনায় দুটি মামলাও করে বনবিভাগ। তবে এখনও আসামিদের কাউকে ধরা যায়নি।

অন্যদিকে, এক মাসের মধ্যে চতুর্থ দফা আগুন লাগার ঘটনায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বন বিভাগ। পৃথক তদন্ত কমিটি হয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকেও।

২৯ এপ্রিল :: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ

পূর্বের সুন্দরবনে বিশেষ ‘সতর্কতা’, রেঞ্জজুড়ে পাস-পারমিট বন্ধ
পরের পূর্ব সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা