সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের দুই দস্যু দল ‘মজনু ও ইলিয়াস’ বাহিনীর প্রধানসহ ১১ দস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন।
দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়ে শুক্রবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাটের মংলা বন্দরের বিএফডিসি (ফুয়েল) জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তারা।
আত্মসমর্পণ করা দস্যুরা হলেন- মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু গাজী, তার দলের সদস্য বাবুল হাসান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রহমত, মো.ইদ্রিস আলী, ইসমাইল হোসেন, মজনু শেখ, মো. রবিউল ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. এনামুল হোসেন এবং ইলিয়াস বাহিনীর প্রধান মো. ইলিয়াস গাজী ও তার সহযোগী মো. নাসির হোসেন। তাদের বাড়ি খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়।
সুন্দরবনের ‘মজনু বাহিনী’ এবং ‘ইলিয়াস বাহিনী’র দস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ (খুলনা, সাতক্ষীরা) ও বঙ্গোপসাগরে দস্যুবৃত্তি করে আসছিলো।
দস্যুদের জমা দেওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২৫টি দেশি-বিদেশি বন্দুক এবং এক হাজার ২০ রাউন্ড গুলি।
এর আগে সকালে সুন্দরবনের গহীনে ট্যাপামারি খালে মজনু বাহিনী এবং কালির খালে ইলিয়াস বাহিনীর দস্যরা র্যাব-৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জমা দেওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১১টি বিদেশি একনলা বন্দুক, তিনটি বিদেশি দোনালা বন্দুক, দুটি পয়েন্ট টু টু বোর বিদেশি এয়ার রাইফেল, তিনটি ওয়ান শুটারগান, পাঁচটি সার্টারগান এবং একটি রিভলবার।
দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, “আজ যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদেরকে আমরা সব ধরনের আইনি সহায়তা দেব।
বিশ্ব ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখতে সরকার সব কিছুই করবে বলে জানান মন্ত্রী।
এখনও যে দলগুলো ওই অঞ্চলে দস্যুতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “আমরা সুন্দরবনে কোনো ধরনের দস্যুতা করতে দেব না। এটা আমাদের সরকারের অঙ্গীকার।”
আত্মসমর্পণের পর দস্যু বাহিনীর প্রধানরা বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে’ বাধ্য হয়ে তারা দস্যুতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ওই জীবনে সব সময় শঙ্কার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন তারা।
উপকূলের এক মৎস্যজীবী এক নেতা বলেন, সুন্দরবনের বৃহত্তম দস্যু বাহিনীর প্রধান রাজু ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গেল কয়েক বছরে বনদস্যু মজনু এবং ইলিয়াস তাদের নিজ নিজ নামে বাহিনী গঠন করে। তারা সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগ ও এবং বঙ্গোপসাগর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
তারা জেলেদের নৌকা ও ট্রলারে হামলা চালিয়ে জাল ও মাছ লুট এবং জেলেদের অপহরণের পর জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। তাদের নির্যাতনে সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হত জেলেদের।
এর আগে গত ৩১ মে সুন্দরবনের অন্যতম দস্যুদল ‘মাস্টার বাহিনীর’ প্রধানসহ ১০ জন একই স্থানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ‘মাস্টার বাহিনীর প্রধান’ মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার ও তার বাহিনীর সদস্যরা সে সময় র্যাবের কাছে ৫১টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় পাঁচ হাজার গুলি জমা দেন।
র্যাব জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে তাদের সঙ্গে দস্যুদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৬৭ জন জলদস্যু-বনদস্যু নিহত হয়েছেন। সেসব অভিযানে প্রায় ৪০০ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
এজি/এসআইএসই/বিআই/১৫ জুলাই, ২০১৬/আপডেট