সরদার ইনজামামুল হক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট, বাংলার বাঘেদের (বেঙ্গল টাইগার) বাড়ি সুন্দরবনের জেলা। হ্যা, ‘বাঘের বাড়ি’। শিক্ষা সফরে সুন্দরবন আসা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার রিমি সারা পথই বলতে বলতে এসেছে ‘বাঘের বাড়ি’ যাচ্ছি।
সুন্দরবন, বাঘের বাড়ি! মিষ্টি কণ্ঠে ছোট ছোট উচ্চারণ আর এদিক ওদিক চাহনি। সে কি উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। মাঝে মধ্যে বাঘ বলে তো ভয়ের ভঙ্গি।
রিমি বাগেরহাট শহরতলীর চিতলী বৈটপুর গ্রামের উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী। বই আর ছবিতে দেখা গল্পের সুন্দরবনে প্রথমবার যাচ্ছে সে। সঙ্গে বিদ্যালয়ের অন্য সহপাঠী আর শিক্ষককেরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই আস্তে আস্তে এগুচ্ছে লঞ্চের দিকে। সারি সারি জালিবোট, ট্রলার, লঞ্চ ভেড়ানো নদীর তীরে। সবাই কাছেই, কিন্তু ঘাট কোথায়? কীভাবে ওঠে লঞ্চে?
নৌযানে ওঠা-নামার জন্য ঘাট বা পন্টুন নেই মংলা নদীর পাড়ে। ফলে নৌযানে থাকা কাঠের তক্তাই ভরসা। কাঁদা-মাটির মাঝ থেকে ছেলে-বুড়ো সবাই সেই তক্তা বেয়েই ওঠা-নামা করছেন।
উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনের সহকারী শিক্ষক মাকসুদা খানম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাগেরহাটে বাড়ি হলেও আমাদের বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী কখনও সুন্দরবন দেখেনি। তাই এ বছর আমার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে সুন্দরবন এসেছি।
মংলা থেকে সুন্দরবনে যাওয়া সবচেয়ে সহজ। তাই আমরাও গাড়িতে করে মংলা এসে, এখান থেকে সুন্দরবনের করমজলের উদ্দেশে রওনা হই। কিন্তু মংলা নেমে এখান থেকে নৌযানে ওঠা-নামার জন্য কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। কাঠের চিকন তক্তা বেয়ে লঞ্চ আর ট্রলারে উঠতে গিয়ে কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, আমাদের অনেক শিক্ষক অভিভাবকেরও পড়ে যাওয়া অবস্থা হয়েছিল।
এখানে বাস থেকে নেমে একটু হাতমুখ ধোয়ার বা টয়লেটে যাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। এজন্য প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ আহম্মেদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সহপাঠী সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য রাতে গাড়িতে মংলা এসেছি। ট্রলারে করে হাড়বাড়িয়া পর্যন্ত ঘুরে রাতেই আবার ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা। বাস থেকে নেমে ট্রলার, জালিবোট পেলেও কোথাও হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হওয়ার মতো ভালো জায়গা নেই।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরবনে আসা ফরহাদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, মংলা ঘাট থেকে সুন্দরবনের করমজল বা হাড়বাড়িয়া যেতে নৌযানগুলোর ভাড়া চাওয়া হয় ইচ্ছো মতো। অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি নৌযানে ওঠা-নামার জন্য প্রত্যেককে খাজনা (ঘাট ফি/চাঁদা) দিতে হয়েছে। ঘাট বা যাতায়াতের কোনো সুবিধা না থাকলেও এখানে নৌযানে ওঠা-নামার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের এসব সমস্যার সমাধান ও সুন্দরবনে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
এইচ/এসআই/বিআই/২১ জানুয়ারি, ২০১৭