স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের ‘করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে’র ২টি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩টি কুমির ছানা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। নিখোঁজ কুমিরগুলো চুরি না পাচার হয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল।
প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক বনকর্মী (লস্কর) ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) কাজ করা অপর আরেক ব্যক্তিকে সাময়িক অব্যাহতি (বরখাস্ত) দিয়েছে বন বিভাগ। গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তত্বাবধানে পরিচালিত ‘করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র’টি সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
সূত্র জানায়, ২৯ জানুয়ারি ভোর থেকে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর ৩৬টি কুমির ছানার কোন হদিস মিলছে না। কেন্দ্রে কুমিরের দু’টি প্যান থেকে বাচ্চাগুলোকে আগের রাতের যে কোন সময়ে সরিয়ে ফেলা হয়। ঘটনাটিকে শেয়ালে বাচ্চা নিয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয়।
তবে শেয়ালে বাচ্চা নেওয়ার মতো প্যান দু’টিতে কোনই লক্ষণ ছিলো না। প্যানের খাঁচার কোন অংশ ছেড়া কিম্বা সেখানে রক্ত বা কুমিরের বাচ্চার শরীরের কোন বিচ্ছিন্ন অঙ্গও পাওয়া যায় নি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, করমজল কেন্দ্র থেকে ৩০ জানুয়ারি আমরা জানতে পেরেছি ৪৩টি কুমির হারিয়ে গেছে বা এখন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দিনগত রাতে এগুলোকে সরানো হয়।
বিষয়টি জানার পর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রাথমিকভাবে ঘটনা ও কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল ঘুরে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসিএফ মেহেদীজ্জামান বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রাথমিক ওই অনুসন্ধানে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রজনন কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রে মাস্টাররোলে কর্মরত এক কর্মীকেও আমরা বিদায় দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে মংলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ডিএফও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আলাউদ্দিন ও করমজল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম।
বিলুপ্তপ্রায় লবণ পানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালনপালনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকায় ৮ একর জায়গার ওপর বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি।
শুরুতেই জেলেদের জালে আটক ছোট ও বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে লবণ পানির দুটি নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান বছর পর্যন্ত জুলিয়েট ও পিলপিল থেকে কেন্দ্র মোট ৭২৩টি ডিম থেকে ৪৬৫ বাচ্চা পেয়েছিল।
নিখোঁজের আগে প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি কুমির ছিল। বর্তমানে তিনটি বড় কুমিরসহ মোট ২৩৪টি কুমির রয়েছে।
এইচ/এসআই/বিআই/০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭