স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ভৈরব নদের বাঁকে গড়ে ওঠা শহর বাগেরহাট। তবে যে নদকে কেন্দ্র করে এই শহরের গোড়াপত্তন; যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, দখল, দূষণসহ নানা অব্যবস্থাপনায় জৌলুস হারাতে বসেছিল সেই ভৈরব নদ।
সম্প্রতি এসব নিয়ে বাগেরহাট ইনফোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার ঝড় ওঠে। আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগেরহাটের নদী রক্ষার আন্দোলন পায় নতুন মাত্রা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভৈরব নদের তীর দখলমুক্ত করতে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। ভৈরব তীরে ময়লা ফেলা বন্ধে উদ্যোগ নেয় পৌরসভাও; সেই সঙ্গে শুরু হয় তীর থেকে ময়লা সরিয়ে নেওয়ার কাজ।
শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হওয়া ভৈরব নদ দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। হাজার হাজার মানুষের সম্পৃক্ততায় রুপ নেয় সামাজিক আন্দোলনে। ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া ফেলা ভৈরব নদ রক্ষার আহ্বানে সাড়া দেওয়া বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনও হাতে নেয় নানামুখী তৎপরতা।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশীদ জানান, ভৈরব রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশকে সফল করতে গেল রোববার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে একটি মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে শিক্ষক, সমাজসেবক, পেশাজীবী সংগঠন, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, এনজিও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন ওই সভায়।
সভায় অংশ নিয়ে বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, ভৈরব নদ যে কোন মূল্যে দূষণমুক্ত করা একটি চ্যালেঞ্জ। যে কোন মূল্যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দূষণ ও অবৈধ দখলদার মুক্ত রাখা হবে ভৈরব নদকে।
মেয়র জানান, পৌর এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নে এরই মধ্যে পৌরসভার নিজেস্ব তহবিল থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাস্তা ও ড্রেনের উন্নয়ন করা হবে।
মেয়র তাঁর মেয়াদকালে ভৈরব নদকে অবৈধ দখল ও দূষণ মুক্তর রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাগেরহাটকে একটি পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে গড়ে তুলতে তার প্রতিশ্রুতি পুনঃব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদ দূষণ ও দখলের শিকার হয়ে আসছিলো। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভৈরবের দূষণ ও নদটিকে রক্ষার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত।
এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভৈরব তীরের পাঁচশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তীরবর্তী স্থানে ফেলা ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পৌরসভা। নদটিকে দূষণমুক্ত করা এবং দূষণ ও দখলমুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে তীর জুড়ে সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।
ভৈরব নদ দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া সামাজিক আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (এসডিজি) মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ফেসবুকের এটুআই এফবি টিভিতে (a2i FB TV) দেওয়া পৃথক ভিডিও বার্তায় ভৈরব রক্ষার আন্দোলন ও এই উদ্যোগকে নিজেদের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমর্থনের কথা জানান তারা।
‘আমি দেখেছি ফেসবুকের মাধ্যমে এই আন্দোলনে এরই মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার লোক সম্পৃক্ত হয়েছেন। এই সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে আশা করি। ভৈরব শুধু একটি নদী নয়; এমন অনেক নদী-খাল দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না। এই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য নদী-খাল রক্ষায় সবাই এগিয়ে আসবেন।’
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভৈরব রক্ষার সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে ২০ তারিখের সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
এইচ//এসআই/বিআই/১৮ এপ্রিল, ২০১৭