অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে অজ্ঞাত রোগে মড়ক দেখা দিয়েছে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ির ঘেরে। এতে দিশেহারা হয়ে হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ বাগদা ও গলদা চিংড়ি চাষি।
হঠাৎ করে দেখা দেওয়া চিংড়ির মড়কে এরই মধ্যে কয়েক হাজার ঘেরের গলদা ও বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা।
এতে মারাত্মাক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করা চাষিদের অভিযোগ এই অসময়ে তারা পাশে পাচ্ছেন না মৎস্য বিভাগকে।
চিংড়ি ঘেরে হটাৎ এই মড়কের কারণ বা রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না মৎস্য বিভাগ ও চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কয়েকটি ঘেরে চাষিরা তার ঘেরের পানিতে নেমে মরে যাওয়া চিংড়ি তুলছেন। মরে যাওয়া চিংড়িগুলোর কিছুটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
চিংড়ি চাষি সরদার নাসির উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া এলাকায় প্রায় আড়াইশ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছি। চলতি মৌসুমে ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে ঘেরে নদী ও হ্যাচারির মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ পোনা ছাড়ি। ঘেরের বাগদা চিংড়ি আকারে ৬৬ গ্রেড হয়ে গিয়েছিল।
৬ দিন হলো হঠাৎ করে দেখি ঘেরে কোন চিংড়ি নেই। পরে ঘেরের পানিতে নেমে হাজার হাজার মরা চিংড়ি দেখতে পাই। আর এক মাস পরেই বাজারে এই চিংড়ি বিক্রি করতে পারতাম।
জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাগেরহাট সদর, রামপাল, মংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। তবে বাগদা চিংড়ির ঘেরে মড়কটা সবচেয়ে বেশি।
‘প্রতি বছরই কমবেশি ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে চিংড়ি মরে থাকে। তবে এ বছর মড়ক মহামারি রূপ ধারণ করেছে। এতে হাজার হাজার চাষি মারাত্মাক আর্থিক ক্ষতিরমূখে পড়েছেন।’
বাগেরহাট সদর উপজেলার চিংড়ি চাষি আসাদুজ্জামান রিপন ও শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত পনেরো বছর ধরে শশীখালি ও খোন্তাকাটা বিলের ৬৫ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছি। প্রতি বছরই কোন না কোন কারণে ঘেরের কিছু চিংড়ি মরে থাকে। তবে এ বছরের মড়ক ভয়াবহ, আমাদের কিছুই থাকবে না।
তাদের অভিযোগ জেলার অধিকাংশ মানুষ কমবেশি চিংড়ি চাষের সাথে সম্পৃক্ত। তবে বিভিন্ন সমস্যায় মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের পাশে পাননা তারা।
চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার ঘেরে চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। জেলায় চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন। চিংড়ি ঘেরে মড়ক লাগার পর আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে চাষিদের ঘেরগুলো পরিদর্শন করেছে। চাষিদের সচেতন করতে নানা পরামর্শ দিচ্ছি।
চিংড়িতে মড়ক লাগার কারণ জানতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম রাবিকুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, চাষিরা যে পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে তা পরিকল্পিত না। তাদের ঘের প্রস্তুতিতে সমস্যা রয়েছে। যার কারনে মৌসুমের শুরুতেই বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। আমরা মারা যাওয়া চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করছি। দ্রুতই ঘেরে চিংড়ি মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। কারণ নির্ণয় হলে চাষিদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হবে।
এইচ//এসআই/বিআই/২৪ এপ্রিল, ২০১৭