আহাদ হায়দার । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
হযরত খানজাহান (রহ.)-এর কীর্তিরাজি দেখতে বাগেরহাটে আসা কৌতূহলী পর্যটকরা এখন আর খুব সহজে খুঁজে পাবেন না দরিয়া খাঁ’র মসজিদ।
হযরত খানজাহান (রহ.)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর এই দরিয়া খাঁ’র মসজিদটি আজ বিস্মৃতপ্রায় নাম। স্থানীয় গ্রামবাসী, এমনকি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাগজপত্রেও মসজিদটি এখন ‘রণবিজয়পুর এক গম্বুজ মসজিদ’ নামে পরিচিত।
এটি বাংলাদেশে সংরক্ষিত মুসলিম যুগের এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
ইউনেসকো প্রাচীন মসজিদের শহর বাগেরহাটে খানজাহানের সময়কালের সব স্থাপনাকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ ঘোষণা করেছে। দরিয়া খাঁর মসজিদও এই বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। নামটি বেমালুম বদলে ফেলায় একদিকে যেমন বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতির অবমূল্যায়ন হচ্ছে, অন্যদিকে যথাযথ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মূল্যবান ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
এই মসজিদ থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে ষাটগম্বুজ মসজিদ। কালের স্রোতে একসময় দরিয়া খাঁর মসজিদ ও দিঘি ফকিরবাড়ির পূর্বপুরুষদের মালিকানা সম্পত্তিতে পরিণত হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পরে এই মসজিদটি সরকারের মালিকানায় নিয়ে চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া ও নিজস্ব সাইনবোর্ডে সংরক্ষিত করেছে। আর দিঘিটি এখনো ফকিরবাড়ির নিয়ন্ত্রণে।
ফকিরবাড়ির অন্যতম জেষ্ঠ সদস্য বেলাল ফকির (৬২) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দরিয়া খাঁর মসজিদ এবং মসজিদের দক্ষিণ দিকের দিঘিটি দরিয়া খাঁর দিঘি নামে পরিচিত ছিল। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা এখনো এই নামেই মসজিদটি চেনেন। মসজিদের পাশের সুন্দর বাঁধানো কবরটি হজরত দরিয়া খাঁর বলে ধারণা করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংরক্ষণের সময়ে মসজিদের সঙ্গে দরিয়া খাঁর নামটি সংযুক্ত রাখা বা কবরটির প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেনি। মসজিদটি ক্রমেই লোকমুখে ‘রণবিজয়পুর এক গম্বুজ মসজিদ’, আবার কখনো বা ‘ফকিরবাড়ি মসজিদ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অলংকৃত মেহরাব, মাঝেরটি তুলনামূলক উঁচু। অযত্নে মেহরাবগুলোর মাটির অলংকরণ ক্ষয়ে গেছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের দেয়াল খুবই স্যাঁতসেঁতে। বুরুজ ও বাইরের দেয়ালের ইট এবং নকশার বিভিন্ন স্থান ছত্রাকের সংক্রমণে কালো হয়ে গেছে। মসজিদের চারদিকে ঘন গাছপালার কারণে রৌদ্র খেলতে না পারায় শেওলা জমেছে দেয়ালের বাইরের ইটে।
সত্তরের দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দরিয়া খাঁর মসজিদটি সংস্কার করলে আবার সেখানে নামাজ পড়া শুরু হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে তাঁরা মসজিদের ভেতরে ও বাইরে সংস্কার করেন। এ সময় সাদা আস্তর ব্যবহারের ফলে স্থাপনাটির ভেতরের প্রকৃত সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। তিনি এই মসজিদটিকে দরিয়া খাঁর মসজিদ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ষাট গম্বুজ জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. গোলাম ফেরদৌস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, কেবল হযরত খানজাহান (রহ.)-এর মাজার ব্যতীত তাঁর সময়ের আর কোনো স্থাপনার গায়ে ‘ফলক’ পাওয়া যায় না। ফলে এসব স্থাপনার সময়কাল নির্ধারণ করা কিছুটা অনুমাননির্ভর।
বর্তমানে মসজিদটিতে দড়িতালুক, রণবিজয়পুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
এসআইএইচ/বিআই/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪