মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ ডুবির পর ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল সুন্দরবনের ঘোলা পানির উপর কালো কষ্টের দাগ ফেলে দিয়েছে। বনের নদী ও খালগুলোতে এ তেল ভাসার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে ব্যাপকহারে পর্যটক কমে গেছে।
সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা ও কচিখালীসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুরা এ মৌসুমে ছুটে আসেন। কিন্তু ট্যাঙ্কার ডুবির পর নদীতে তেল ভাসা ও বাতাসে তেলের গন্ধের কারণে অনেকেই আসছেন না সুন্দরবনে। আবার অনেকেই মংলা পর্যন্ত এসে ফেরত যাচ্ছেন।
ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ মাস্টার মোকলেসের (৫০) সন্ধান না পাওয়ায় নদীর চরে চলছে এখনও তার স্বজনদের আহাজারি।
বনের গাছের গোড়ায় তেলের আবরণ লেগে রয়েছে। ইতোমধ্যে মাছ, গুইসাপ মরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে। শ্যালার যে এলাকায় ট্যাঙ্কারটি ডুবে গেছে সেটি ডলফিনের অভয়ারণ্য। সে এলাকায় এখন আর ডলফিন জাগছে না।
এমডি মা সোহাগী ট্রলারের চালক মো. ফোরকান হোসেন ও লঞ্চমালিক হাবিবুর রহমান জানান, শীতের এই ভরা মৌসুমে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো সুন্দরবন। কিন্তু ট্যাঙ্কার ডুবির পর অনেকটা পর্যটকশূণ্য হয়ে পড়েছে বন।
তিনি আরও জানান, কয়দিন আগেও পর্যটকদের ভিড়ের কারণে তাদের ব্যস্ত সময় কাটছিলো। কিন্তু এখন অলস সময় কাটছে।
সুন্দরবনের করমজলে কথা হয় ঘুরতে আসা কবির, মুসা, কালাম, মোস্তাফিজ, লিটন ও হারুনের সঙ্গে।
তারা বলেন, সুন্দরবনের ইতিহাসে ট্যাঙ্কার ডুবির মতো এতো বড় দুর্ঘটনা এর আগে ঘটেনি। আমরা খুলনা থেকে এসেছি। আমাদের আগেই করমজলে আসার দিন ঠিক করা ছিলো। সবাই সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। যার কারণে ট্যাঙ্কার ডুবির পরও আমরা এসেছি।
করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনার প্রথম দিন নদী থেকে পানি তুললে তার সঙ্গে তেল ঢুকে পরে। এতে করমজলের ৭টি কুমির অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এ বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটক কম। অন্যান্য সময় দিনে ৩-৪ হাজার পর্যটক আসতো। সেখানে শুক্রবার বেশি হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সংখ্যার মাত্র ৫ ভাগের এক ভাগ পর্যটক এসেছেন।