টানা অবরোধ-হরতাল ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভরা মৌসুমেও পর্যটক শুন্য ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ সুন্দরবন-ষাটগম্বুজসহ বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থান গুলো।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জান গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের লাগাতার সহিংস অবরোধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের পর্যটনশিল্প। পর্যটক না থাকায় সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
এ অবস্থায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাভাবিক না হলে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান (র.) এর মাজার, নয়গম্বুজ, দরিয়া খাঁ’র মসজিদ বা রণবিজয়পুর মসজিদ, সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের ওয়ার্ড হ্যারিটেজ সাইড কেন্দ্রগুলো পুরো শীত মৌসুমই পর্যটকহীন কাটবে বলে সঙ্কা তাদের।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শীত মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে সব চেয়ে বেশি। এই মৌসুমে সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, কটকা কচিখালী এলাকা সাধারন সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা আর টানা অবরোধে-হরতালে থমকে গেছে পর্যটকদের আগমন।
কিন্তু এবছর সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। শেষ কয়েক দিনে তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬০-১০০ জনে। এ অবস্থায় চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় অন্তত ৩৫-৪০ লাখ টাকা কম হবার আশঙ্কা করেন তিনি।
ডিএফও আমির হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাভাবিক না থাকায় গত পর্যটন মৌসুমেও সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন কম হয়েছিল। যদিও ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পর্যটক-দর্শনার্থীদের আগমন সাভাবিক ছিল সুন্দরবনে। কিন্তু করমজল কেন্দ্রের রাজস্ব আয় ৪০ লাখ টাকা থেকে কমে ২০ লাখ টাকায় নেমে এসেছিল। তবে এবারের অবস্থা আরো খারাপ। জানুয়ারির শুরু থেকে প্রায় পর্যটন শুন্য সুন্দরবন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে বিদেশি পর্যটকদের আগমন শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। নেই দেশি দর্শনার্থী-পর্যটকও। আস পাশের জেলা-উপজেলার হাতেগোনা ‘লোকার কিছু টুরিস্ট’ করমজল, হাড়বাড়িয়ায় আসছে। তবে তারও খুবই কম।
এ অবস্থায় লক্ষ মাত্রার ৫০ ভাগ রাজস্ব আদায় করাও প্রায় অসম্ভব বলে আশঙ্কা তার।
এব্যাপারে গ্রীণ হলিডেস ট্যুরস এর সিইও বোরহান উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কেবন মাত্র সুন্দরবনে চলতি জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিরত আমাদের ৬-৭টি বড় দেশী-বিদেশী গ্রুপের ‘কনফার্ম ট্যুর’ বাতিল হয়েছে। আমাদের সব আয়োজন ঠিক ছিলো। কিন্তু কেবল হরতাল-অবরোধে পর্যটকরা আসতে চাইছেন না।
এঅবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
বেঙ্গল ট্যুরসের ওই কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে সুন্দরবনে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসের অধিকাংশ ট্যুর গুলোও বাতিল করেছে দেশি বিদেশী পর্যটকরা।
মংলা টুরিস্ট বোট (জালি বোট) মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল জানান, মংলায় প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টুরিস্ট বোট, লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান রয়েছে। এতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে কোনো পর্যটক নেই। আয়ও নেই।
পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বোটের কর্মচারীদের। মালিকেরাও হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।
এ অবস্থা জানুয়ারিতে ছয়-সাত লাখ টাকাও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
একই অবস্থা বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, খানজাহানের মাজর, অযোধ্যা মঠসহ আসপাশের পার্ক ও রিসোর্ট গুলোতে। কমে গেছে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন।
যার প্রভার পড়ছে স্থানীয় দোকন মালিক থেকে হোটের-মোটের ব্যবসায়ীদের উপর।
বাগেরহাট ষাটগুম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের কাষ্টোডিয়ান মো: গোলাম ফেরদৌস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হরতাল-অবরোধে যানবাহন কম চলাচলা করছে। যার কারণে দূরের দর্শনার্থীরা একেবারেই আসতে পারছেননা। তাই বাগেরহাটের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো এবছর পর্যটক শুন্য।
‘চলতি বছরে লক্ষমাত্রা ৩০ লক্ষ টাকার চেয়ে ১০-১২ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের আশা ছিলো তাদের। কিন্তু লাগাতার অবরোধ-হরতালে আমাদের লক্ষমাত্রা পূরণ এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানন তিনি।
বাগেরহাটের বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র সুন্দরবন রির্সোট এন্ড পিকনিক কর্ণারের সত্বাধীকারী ডা. মোশাররফ হোসেন মুক্ত বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পর্যটন শিল্প ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন । গত বছরের তুলনায় এবারে টার্ণওভার (turnover) দশ ভাগও না। আমরা এই ক্ষতি সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবো না। লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে আমরা বসে থাকি শীতের এই মৌসুমের জন্য। আর এই মৌসুমেই এই অবরোধ।
বাগেরহাটের হয়রত খানজাহান(র.)এর মাজার সংলগ্ন হোটেল অভির (আবাসিক) সত্বাধীকারী মোহাম্মদ হুদা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাইরের পর্যটক-দর্শনার্থীরা না থাকায় হোটেলের ৭৫টি সিটের প্রায় সবগুলোই এখন ফাঁকা থকছে। এই অবস্থায় কর্মচারিদের বেতন দিব কিভাবে তাই নিয়ে দু:চিন্তায় আছি।
তিনি আরো বলেন, এ অবস্থায় শুধু এখাতের সাথে সরাসরি যুক্ত ব্যাবসায়িই নয়, এখান কার ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িরাও মারাত্মাক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। পর্যটন মৌসুমে পর্যটক না থাকায় সার্বিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে এখানকার অর্থনীতি।