অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধ উপচে পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী সহস্রাধিক ঘরবড়িসহ হাট-বাজার, কল-কারখানা, মাছের ঘের, পুকুর, ফসলি জমিসহ বিস্তৃণ এলাকা।
ভেঙে গেছে বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দৈবজ্ঞহাটি ও নাজিরপুর প্রকল্পের বেড়িবাঁধের দু’টি অংশ। এসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার সন্নাসী, পৌরসভা, শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি ও সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজার এবং সংলগ্ন নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর। গবাদি পশুর আশ্রয়স্থল, বসতঘর এমনকি রান্না ঘর তলিয়ে গেছে পানিতে। ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা।
পানির কারণে অনেকে পৈত্রিক বসতভিটা ছেড়ে উঁচু এলাকায় গিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছেন। কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্জকরণ গ্রামের ফেরদৌস মুন্সি বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৌবজ্ঞহাটি প্রকল্পের নির্মানাধীণ বেড়িবাঁধ ভেঙে পঞ্চকরণ বাজারসহ আশপাশের গ্রাম গুলোর দুই/তিনশ’ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক পরিবারে রান্না-বান্না বন্ধ রয়েছে। এলাকার মানুষ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
অব্যাহত বর্ষা এবং জোয়ারের পানি বেড়ে জেলার বিস্তৃণ এলাকার ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
মোরেলগঞ্জ পৌরসভার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, জোয়ারে পানগুছি নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে প্রতিদিন দিনে দু’বার উপজেলার সড়কের বাজারসহ প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় চরম দুরবস্থায় রয়েছে এখানকার মানুষ।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারে মুদি দোকানি মো. জামাল হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হটাৎ করে বেড়ে যাওয়া জোয়ারের পানিতে মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার আগেই দোকানে থাকা সব কিছু তলিয়ে যায়। বাজারের অধিকাংশ দোকানিরই একই অবস্থা বলে জানান তিনি।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জোয়ারে ভৈরব নদীর পানির চাপে বাঁধ উপচে জেলার সমৃদ্ধ যাত্রাপুর বাজার প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বাজারের দোকান পাট, মিল কল-কারখানা, খাদ্য গুদাম তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর, চাপাতলা, চাপাতলা পূর্ব পাড়া, লাউপালাসহ আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইনদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সব নদ-নদীর পানি দুই থেকে তিন ফিট বৃদ্ধি পায়। বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের মুখে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ ও ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলোর মেরামত কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।