বঙ্গোপসাগর তীরে সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপি ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিামার উৎসব। উৎসবকে ঘিরে হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার ও বনজ সম্পদ রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বন বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলোরকোলে শুরু হতে যাওয়া এই উৎসবে জেলা-বাওয়ালী, দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থীসহ প্রায় অর্ধ লক্ষ পর্যটক অংশ নেবে বলে আশা আয়োজকদের।
প্রতিবছর সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের ভেতরে এ উৎসবের আগে ও পরে হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের অভিযোগ ওঠে। ফলে এবার বন বিভাগের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছাড়াও বন বিভাগের ২টি সহ প্রশাসনের অন্তত ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাস মেলার সময় সুন্দরবনে কাজ করবে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের পৃথক ২০টি ভ্রাম্যমাণ দল টহলে থাকবে।
এগুলো হলো, বাগেরহাট থেকে মংলার পশুর নদী দিয়ে চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী, শরণখোলার বলেশ্বর নদী দিয়ে বগী, শরণখোলা স্টেশন হয়ে দুবলার চর দিয়ে আলোরকোল এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী, কয়রা ও নলিয়ান স্টেশন হয়ে দুবলার চর আলোরকোল।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার প্রথম ভাটার সময়ে ওই ৮টি নৌরুট দিয়ে লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারযোগে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা আলোরকোলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। বন বিভাগের নির্ধারিত ১৩টি বন অফিস থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে রাস মেলায় যাওয়ার অনুমতিপত্র নিতে হবে।
এছাড়া এবার প্রবেশের ক্ষেত্রে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সবাইকে নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। সুন্দরবনে প্রবেশের সাধারণ বিধি-বিধানের পাশাপাশি রাস উৎসবের সময় বাধ্যতামূলক কিছু শর্ত ও নিষেধাজ্ঞাও এবার আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া, অগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য সাথে না নেওয়ার মতোন সুন্দরবন ভ্রমনের সাধারন নিয়ম গুলোও প্রযেজ্য হবে। এসব নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন ও অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেলা-জরিমানা করা হবে বলে ডিএফও জানান।
অপরদিকে, বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, রাস মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৩ জন চিকিৎসকসহ ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম থাকবে।
হিন্দু ধর্মালম্বীরা রাস পূর্ণিমার পর দিন প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের লোনা পানিতে পূর্ণস্নান করে তাদের পাপ মোচন হবে, এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকে। কালের বির্বত্তণে জেলে ও বনজীবীসহ অন্যান্য ধর্মলম্বিরাও সুন্দরবনের দরবেশ গাজী-কালুর স্বরণের মানত দিতে এই উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। হাজার-হাজার মানুষের পদচারণায় এই রাস উৎসব মেলায় পরিণত হয়।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন জানান, রাস উৎসবে তীর্থ যাত্রী, ইকোটুরিস্ট ও দর্শনার্থীদের ট্যুরিষ্টলঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে এসে থাকে। আসে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। এই রাস উৎসবের সময় তিন দিনব্যাপি মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন পেণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আযোজন করা হয় থাকে।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে রাস মেলা ও উৎসবকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা এবং বনপ্রাণী শিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী বছর থেকে রাস উৎসবে আসতে ইচ্ছুকদের আগাম আবেদন করতে বলে জানান ডিএফও মো. সইদুল ইসলাম।