সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্প এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আগুন লাগার প্রায় ১২ ঘন্টা পর বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাত ১০টার দিনে তা নিয়ন্ত্রনে আসে বলে বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহামুদ দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, এখন আর বনের মধ্যে কোথাও আগুন বা ধোয়া দেখা যাচ্ছে না। আগেই বনের ভেতর ফায়ার লাইন (দীর্ঘ অগভীর নালা/গর্ত) কাটা হয়েছে। তাই নতুন এলাকায় আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।
‘বৃহষ্পতিবার সারাদিন ফায়ার সাভিসকে নিয়ে নিবিড় পযবেক্ষণ করবে বনবিভাগ। কোথাও নতুন করে আগুন বা ধোয়া দেখা গেলে তা নেভানো হবে।’
এর আগে বুধবার সকাল ১০টার দিকে সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পের আব্দুল্লাহ’র ছিলা এলাকায় আগুন দেখতে পায় বন বিভাগের কর্মীরা। দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী পঁচাকোড়ালিয়া ও নাপিতখালী (বিল) এলাকায়।
বনের ওই সব এলাকার প্রায় ১০ একর জুড়ে বিভিপ্ত ভাবে বুধবার দিনভর আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এতে পুড়ে গেছে সুন্দরীসহ বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম।
“পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।”
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।
মো. সাইদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগুন নেভাতে দুপুর থেকে বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সাথে যোগ দেয় বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট।
এই অগ্নিকান্ডের মাত্র ১৭ দিন আগে ২৭ মার্চ সুন্দরবনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় আগুন লেগে প্রায় এক একর বনভূমি পুড়ে যায়।
২৭ মার্চের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের পর ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বনজীবী ও স্থানীয়দের ‘অসতর্কতা’কে দায়ী করা হয়।
ভবিষ্যতে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড এড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছিলো। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- “বনকর্মীদের সবসময় সতর্ক অবস্থায় থাকা, বনজীবীসহ অন্যান্য মানুষের বনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা, বনের স্থানে স্থানে কূপ খনন করে পানির ব্যবস্থা করা যাতে আগুন নেভানোর কাজে তাৎক্ষণিকভাবে পানি পাওয়া যায়।”
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সুন্দরবনে প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ২২ মার্চ। এর পর থেকে গেল ১৪ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় অন্তত্য ২০ বার আগুন লেগেছে। এতে ৬০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল পুড়ে যায়।
এর মধ্যে সুন্দরবন পূব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায়ই গত ১২ বছরে অন্তত্য ১৪টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৪০ একর বনভূমি। তবে স্থানীয়দের হিসাবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বনের পরিমাণ আরো বেশি।
এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সুন্দরী, গরান, গেওয়া, বাইন, সিংড়াসহ অনেক মূল্যবান গাছ পুড়ে গেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, বারবার অগ্নিকাণ্ডের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে বন্য পশু-পাখি ও বাস্তুসংস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তার মাতে, আগুনের কারণে মাটির উর্বরতাশক্তি কমে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া বনে জোয়ার-ভাটা না থাকলে নতুন করে ম্যানগ্রোভ জন্মাতেও অনেক সময় লাগে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বারবার আগুনের হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষায় বনসংলগ্ন এলাকাবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি বন বিভাগের জন্য নিজস্ব ফায়ার স্টেশন স্থাপনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।