অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
কুমির ছানা নিখোঁজ ও হত্যার বিষয়ে আবারও নিজেদের মত পাল্টেছে বন বিভাগ। সুন্দরবনের করমজল বন্যপাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ছানা চুরি বা হত্যা করা হয়েছে এমন পূর্ব অবস্থান থেকে সরে এসে বন বিভাগ এখন বলছে ‘চিতা বিড়াল’ এগুলোকে খেয়েছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, প্রজনন কেন্দ্রের একটি প্যানে (কৃত্তিম পুকুর) রোববার ১৪টি কুমির ছানাকে ‘মৃত’ ও দুইটি কুমির ছানার লেজের অংশ পাওয়া যায়।
ওই প্যানের আরও একটি কুমির ছানা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় বন বিভাগ ‘ক্যামেরা ট্রাপিং’ শুরু করলে তাতে একটি ‘চিতা বিড়াল’ শনাক্ত হয়।
সাইদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “চিতা বিড়ালটি কুমির ছানাগুলোকে খেয়ে ফেলে। বন্যপ্রাণীটি হিংস্র হওয়ায় তাকে দূর থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।”
এতে অনেকের মনে সন্দেহ- একটি বিড়াল ধরে সেটিকে গুলি করে মেরে ছবি তোলা হয়েছে।
গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমির ছানা ‘চুরি’ হয় বলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো.মেহেদীজ্জামান এর আগে জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য বাচ্চাগুলোকে হত্যা করা হয় বলে জানান ডিএফও।
কুমির ছানা হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বনবিভাগের লস্কর মাহাবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে বনবিভাগ। গঠন করে তদন্ত কমিটি, করা হয় চুরির মামলা।
লস্কর মাহাবুবের সহযোগিতায় জাকির কুমিরগুলি পাচার করে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন মেহেদীজ্জামান।
গত ২৯ জানুয়ারি প্রথমে ৩৬টি কুমির ছানা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বনবিভাগের নজরে আসে। পরদিন আরও ৭টি বাচ্চা নিখোঁজ হয়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে প্যানে রাখা আরও ১৭টি কুমির ছানা মৃত অবস্থায় পায় বন বিভাগ।
কুমির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে ক্যামেরা ট্রাপিং বসানো হয় বলে জানান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে রোমিও নামে একটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুটি নারী কুমিরসহ ২১৭টি কুমির রয়েছে।
এর আগে, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার জলোচ্ছ্বাসে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছোট-বড় ৬১টি কুমির পানিতে ভেসে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাইরের কিছু বড় প্রাণী ১৮টি কুমিরের বাচ্চা খেয়ে ফেলে।
বন বিভাগের ভাষ্য, চিতা বিড়ালটিই চলতি সময়ে কুমিরের বাচ্চাগুলো খেয়ে ফেলেছে। তবে সোমবার করমজল ঘুরতে আসা কয়েক জন পর্যটক বলেন, ২৯ জানুয়ারি থেকে কুমির বাচ্চা হত্যা এবং উধাও হওয়ার ঘটনার পর বন বিভাগ সতর্ক হলে আবার পুনরায় ১৯টি কুমির ছানার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না।
আর এসব দেখে উৎসুক এক পর্যটক মন্তব্য করেন ‘চিতা বিড়াল’ মরে বনকর্তাদের যেন বাঁচিয়েছেন।
এদিকে, কুমির ছানাগুলো চুরি হয়েছে দাবি করে একজনকে শাস্তি দিলেন এখন চিতা বিড়ালে ‘খেয়েছে’ বলছেন এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
তবে তিনি বলেন, কুমির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গঠিত কমিটি এখনও তদন্ত করছে। কমিটির দুই কর্মদিবসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তদন্তের জন্য আরও ৭ দিন সময় চেয়েছে।
এজি/এসআই/বিআই/০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
** গুলি করে বিরল ‘চিতা বিড়াল’ মারলো বন বিভাগ
** সুন্দরবন থেকে এক সপ্তাহে ৬০ কুমির ছানা গায়েব
** পাচার নয়, কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে: বনবিভাগ
** সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর ৪৩টি কুমির ছানা উধাও