প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাট / কচুয়া / ছবিই যার স্বপ্ন…

ছবিই যার স্বপ্ন…

Tukur-Pictureআর্ট কলেজে পড়ার সুযোগ হয় নি। আর্থিক সমস্যা আর ছবি আকার নেশায় হয়নি মাধ্যমিকের ধাপও পেরোনো। তবে থেমে থাকেনি নিজের ভেরতের শিল্পি স্বত্তাকে রং-তুলির খেলায় ফুটিয়ে তোলার নেশা।

সখ আর ভালোবাসা থেকে ছবি আঁকে তারিকুল ইসলাম টুকু। যদিও আছে প্রতিবন্ধকতা, আছে নানা কান কথা- কটুক্তি।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাংদিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে তারিকুল ইসলাম টুকু।

পেনসিল স্কেচের পর গত চার বছর ধরে অয়েল পেন্টিং করে আসছেন। চোখে দেখা এবং মনের কল্পনায় রং-তুলির ছোয়ায় আকেন অসাধারন সব দৃশ্য। যে সব ছবি বলে নানা কথা !

আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিত্র কর্ম এখন থেমে যাওয়ার পথে। ভাবছেন হয়তো পূরণ হবে না তার মনে আশা।

তবে, গ্রামের অনেকেই ভালো চোখে দেখছে না টুকুর এ চিত্রকর্ম। তারা বলেন, ছবি আকার কারণে টুকুকে মৃত্যর পর খেসারত দিতে হবে। কিন্তু গ্রামের মানুষের কথায় টুকুকে কান দিতে নিষেধ করেছেন টুকুর মা।

ছেলের শিল্পকর্ম নিয়ে আসা বাদি টুকুর মা ছালেহা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, টুকুর শিল্পকর্ম নিয়ে গ্রামের মানুষ নানা কথা বললে। তবে তার বিশ্বাস একদিন নামকরা শিল্পী হবে তার ছেলে।

তিনি জানান, টুকুর ধ্যান-জ্ঞান সব চিত্রকর্ম নিয়ে। খাওয়া নাওয়া ভুলে সারা দিন সে শুধু ছবি আঁকা নিয়ে পড়ে থাকে। সৃষ্টিকর্তার কাছে তার প্রার্থনা আল্লাহ যেন তার ছেলের মনে আশা পূরণ করেন।

তিনি আরো জানান, আথিক সমস্যার কারণে তিন বছর ধরে এসএম সুলতানের বাড়ি যাওয়া হয়নি টুকুর। এবছর মা অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে এসএম সুলতানের বাড়ি পাঠান।

টুকু জানান, ছোট বেলা থেকে পেনসিল স্কেস করতে করতে ২০১০ সালে নিজে নিজেই শেখেন অয়েল প্রিন্টিং। বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে সেই থেকে পেন্টিং করে আসছেন। তবে রং আর ক্যানভার্স কেনার সাধ্য এখন তার নেই।

মাঝে মাঝে মামা ঢাকা থেকে রং কিনে পাঠান আর মা সংসারের খরচ কমিয়ে টাকা দেন তাকে। সেই টাকা দিয়ে তিনি ক্যানভার্স কেনেন।

বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলে। ৩২ বয়সী ছেলে বেকার। তাই তো কিছুটা ক্ষুব্ধ বাবা আমজাদ হোসেন।

তবে, উপরে উপরে ক্ষুব্ধ হলেও ছেলে শিল্পকর্ম নিয়ে আনন্দিত তিনিও। তাই তো ছবি আকার ব্যাপারে ছেলেকে সহযোগিতা করেন।

টুকুর বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে তার অসাধার সব শিল্প কর্মের। তার আঁকা ছবির মধ্যে রয়েছে- মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্তাক্ত বাংলায় নারীদের শালীনতাহানী, মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের প্রস্তুতি তুলে ধরেছেন।

মেক্সিম গ্রোর্কির গল্প অনুসরণে শ্রাবনের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় ভাঙ্গা নৌকার নিচে যোনকর্মীর সাথে নায়কের অবস্থান, এক নারী ও ২৬ পুরুষ নিয়ে লেখা গল্পকেও টুকু তার কল্পনায় এঁকেছেন। কল্পনায় একেছেন মৎস্যকণ্যা ও পানিতে পড়ে যাওয়া পাখির ছানাকে নৌকার চালকের আনার দৃশ্য।

অসাধারন প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রেমিক-প্রেমিকার আনন্দ বিরহ ,গ্রামবাংলার চিরায়ত চিত্র, পথশিশুদের জীবন, ইভচিজিং, ঝড়ের মধ্য ছেলেকে পিঠে নিয়ে বাবার নিরাপদ আশ্রয় খোজার দৃশ্য এঁকেছেন তিনি রং তুলির আছড়ে।

টুকুর ভবিশ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি জানান, একাত্তরের বর্বরতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভুমিক বড় একটা ওয়ালে তুলে ধরা এবং ঢাকায় একটি একজিবিশন করা ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু বড় প্রতিবন্ধকতা আর্থিক সমস্যা।

টুকুর বন্ধুরা মনে করেন, সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে তার এ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে।

লিটন নকিব নামের টুকুর এক বন্ধু টুকুর প্রতিভা বিকশিত হোক এবং বেঁচে থাকতেই যেন মূল্যায়ন হয় তার চিত্র কর্মের এমন প্রত্যাশা তাদের।

২৩ অক্টোবর ২০১৪ :: আরিফ সাওন,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আই হক-এনআরএডিটর/বিআই

About Arif Shaon

Exit mobile version