নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে এক আদালত কর্মচারীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ও সহকর্মীদের দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে শহরের হরিণখানা এলাকার পিসি কলেজ রোডের উঁচু পোলের উপর।
ভুক্তভোগী মো. মতিউর রহমান বাগেরহাট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নকল শাখার প্রধান তুলনাকারক হিসেবে কর্মরত। তিনি শহরের কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন মতিউর রহমান। অভিযোগ, এ সময় সাদা পোশাকে একদল পুলিশ তার গতিরোধ করে। পরে তাঁর মোটরসাইকেল তল্লাশি করে ৯০ পিস ইয়াবা পাওয়ার দাবি করে পুলিশ।
ঘটনার সময় স্থানীয় কিছু যুবক ভিডিও ধারণ করেন এবং তা রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাধারণ পোশাকে থাকা একজন পুলিশ সদস্য একটি পলিথিন থেকে সাদা কাগজের ওপর ইয়াবা ঢালছেন। পাশে থাকা একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার ওই যে যারা ভিডিও করছে, ওনাদের সাক্ষী নেন।’
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ মতিউর রহমানের মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশ খুলে তল্লাশি করছেন। এ সময় হ্যান্ডকাফ পরা মতিউর রহমান বলেন, ‘এইটা চক্রান্ত, এটা সম্পূর্ণ একটা চক্রান্ত।’
এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এরপর পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে মতিউরকে সদর থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত ৩টার দিকে একটি কাগজে স্বাক্ষর রেখে (মুচলেকায়) তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য:
মতিউর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ একদল লোক আমার পথ আটকায়। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে সার্চ ওয়ারেন্টের কথা বলে। কিন্তু আমি দেখতে চাইলে তারা তা দেখায়নি। আমরা দেহ তল্লাশি করে, মোটরসাইকেলের সিটি তুলে দিতে বলে, তল্লাশি করে। এ সময় একজন আমাকে সরিয়ে অন্যপাশে নিয়ে যায়। ঠিক তখনই অপর একজন বলে, “পাইছি, পাইছি।’’ এরপরই আমার হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারবার পরিচয় দিলেও তারা শোনেনি। আশেপাশে অন্ধকার থাকলেও মুহূর্তেই কিছু লোক ও সাংবাদিক এসে ভিডিও করতে থাকে। থানায় নিয়ে গিয়ে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখে, জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে একটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়, যদিও আমি জানি না সেখানে কী লেখা ছিল।’
সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া:
মতিউরের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি কখনো মাদক তো দূরের কথা, বিড়ি-সিগারেট বা পানও খান না। এটি একটি স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। মতিউরের সঙ্গে এলাকার কিছু ব্যক্তির জমি নিয়ে পুরনো বিরোধ রয়েছে। এই কারণেই তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার সুমন মোড়ল বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে বিষয়টি জানতে পারি। পরে আদালতের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। আমরা এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
আদালতের এক নায়েব বলেন, ‘মতিউর একজন নিরীহ মানুষ। তার সঙ্গে এমনটা হতে পারে এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আদালতে কাজ করি, আমাদের সঙ্গেই যদি এমন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা!’
তদন্ত কমিটি গঠন:
ঘটনার পর আদালতের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মঙ্গলবার কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
ওই কমিটি বুধবার পুলিশে বক্তব্য শুনে বলে জানিয়েছেন অপর একটি সূত্রটি।
পুলিশের বক্তব্য:
জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি মো. মাহামুদ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি ‘মেকিং’ মনে হচ্ছে। যিনি তথ্য দিয়েছিলেন, তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ইয়াবাগুলো জব্দ করা হয়েছে, প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যার বাইকে ইয়াবা পাওয়া গেছে, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের পূর্বের কোনো অভিযোগ নেই। অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
এসাই/আইএইচ/বিআই/২৬ আগস্ট, ২০২৫
