স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

‘দুর্ঘটনাগুলো হয়ই তো বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে। তারা গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে আর বিচার হলেই এখন ধর্মঘট। এ কেমন প্রতিবাদ!’

‘যে অপরাধ তাতে তো তো ফাঁসি হওয়া উচিত। কিন্তু আদালত যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তার পরও তারা মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন। কিছু বলার ভাষা নেই।’ পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে তিক্ত আব্দুল কাদের বাগেরহাট বাস স্টান্ডে দাড়িয়ে এভাবেই নিজের ক্ষোভের কথা বলছিলেন বাগেরহাট ইনফোকে।
বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল কাদের থাকেন খুলনার আলিয়া মাদ্রাসা রোডে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওই শিক্ষকের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো ঘড়ির কাটায় তখন ৫টা ছুই ছুই। তিনি বলেন, ধর্মঘটের কারণে সকালে স্কুলে যেনে পারেন নি। মোরেলগঞ্জ যেতে দুপুর দেড়টায় বাসা থেকে বেরিয়েছি। ভ্যান, ইজিবাইক, মাহেন্দ্রে করে ভেঙে ভেঙে মাত্র বাগেরহাট পৌঁছালাম। এখন মোরেলগঞ্জ যাব কি করে যানি না।
এই দুর্ভোগ কমাতে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে তা নিশ্চয়ই আপোষ নয়। আদালতের রায়ের প্রতিবাদে জনগনকে জিম্মি করার জন্য তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
খুলনা সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সেখ হাসিবুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘আমি বাগেরহাট থেকে কলেজে যাওয়া আসা করি। আজ ক্লাস ছিলো কিন্তু গাড়ি না চলায় খুলনা যেতে হয়েছে ভ্যান, রিকসা, মাহেন্দ্র আর ইজিবাইকে করে ভেঙে ভেঙে। একদিকে গাড়ি নেই। তার পর এসব যানবাহনে ১০ টাকার দুরত্বের ভাড়া ৩০ টাকা দিতে হয়েছে।
অন্যসময় একশ’ কুড়ি টাকায় খুলনা থেকে আসা-যাওয়া করতে পারি। কিন্তু আজ বাগেরহাট থেকে কলেজে গিয়ে আসতে খরচ হয়েছে ২৭০ টাকা। সময়ও লেগেছে চার গুণ। আমরা স্টুডেন্ট মানুষ, কিভাবে পারব।
ব্যাটারি চালিত অটোর ড্রাইভার মো. আলতাফ হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পথে পথে বাস শ্রমিকদের টাকা দিতে হচ্ছে। বাস স্টান্ড থেকে অটোতে যাত্রী তুলতে প্রতিবার একশ’ টাকা দিতে হচ্ছে। তাই ভাড়াও বেশি নিচ্ছি।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইসমাল হোসেন বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গত দু’দিন ধরে যেতে পারছিনা। গতকাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবরে বাস স্টান্ড এসেছিলাম তবে গাড়ি চলে নি। বলেছিলো আজ (মঙ্গলবার) সকালে যাবে। টিকিটও নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু সকালে স্টান্ডে এসে শুনছি সারাদেশে ধর্মঘট শুরু হইছে। ধর্মঘটকারীরা প্রাইভেট কার, মাইক্রোসহ অন্য যানবাহানও চলতে দিচ্ছে না। ফলে কোথাও যেতে পারছি না।
তার মতো মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানেন না অধিকাংশ যাত্রীরা। সবাই জানতেন সোমবার খুলনা বিভাগের ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর। আর পথে বেরিয়েই যাত্রীরা পড়েন দুর্ভোগে।
২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাসচালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবিতে রোববার থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আঞ্চলিক কমিটি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকে তা প্রত্যাহারের খবর আসে।
ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সারাদেশ। আর বাগেরহাটসহ খুলনা বিভাগরে ১০ জেলায় এমন অচলাবস্থা চলছে তিন দিন ধরে।
বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্কর বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পরিবহন ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। আমাদের হাতে কিছু নেই। আমাদের বিষয় হলে আমরা যাত্রীদের স্বার্থে বাস চালাতাম। এখন সারা দেশের ব্যাপার, তারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।
এবিষয়ে জানতে ধর্মঘট আহ্বান করা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এইচ/এসআই/বিআই/২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
** ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে লুকোচুরি
** ‘কিছুই চলছে না, জিম্মি হয়ে আছি’
** পরিবহন ধর্মঘট: বাগেরহাটে যাত্রী দূর্ভোগ চরমে