প্রচ্ছদ / খবর / গুলি করতে করতে জেলে পল্লীতে প্রবেশ

গুলি করতে করতে জেলে পল্লীতে প্রবেশ

আরিফ সাওন, সুন্দরবন থেকে ফিরে:
SB-Tour-(RAB-with-Arif)-2যখন জেলে পল্লীতে আসেন, ঠিক ফিল্ম স্টাইলে আসেন। তার সোর্স যখন নিশ্চিত করে যে, আসা নিরাপদ, তখনই সে তার বাহিনীর সদস্যদের সাথে করে আত্যাধুনিক নৌযান নিয়ে গুলি করতে করেত জেলে পল্লীতে প্রবেশ করেন। জেলে পল্লীর জেলেরাও বুঝতে পারেন কে আসছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জেলেরা। এরপর শুরু হয় মারধর। এ স্টাইলেই শুধু রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী জেলে পল্লীতে পবেশ করেন।

মংলা থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দুরে সুন্দরবনের নারিকেল বাড়িয়া জেলে পল্লীর জেলেদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

শুটকি রফতানি করে প্রচুর প্ররিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আসলেও শুটকির মৌসুমে শস্তিতে নেই সুন্দরবনের নারিকেল বাড়িয়া শুটকি পল্লীর জেলেরা।

সরজমিন নারিকেল বাড়িয়া জেলে পল্লীতে গিয়ে জানা যায়, দস্যুদের চাঁদা না দিলে জেলেদের ধরে নিয়ে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তবে দস্যু দমনে সক্রীয় রয়েছে র‌্যাব ও কোস্টগার্ড। র‌্যাবের অভিযানের ফলে বিগত ৫ বছরের তুলনা দস্যুতা অনেকটা কমেছে। ২০ টি বাহিনীর মধ্যে এখন ৭ টি বাহিনী রয়েছে।

জানা যায়, শিরা উপশিরার মত সুন্দবনের রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খাল ও নদী। এসব খাল ও নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও সাতক্ষীরার প্রায় ৭০ হাজার জেলে। ইলিশ মৌসুমের পর কার্তিক মাস থেকে শুটকির মোসুম শুরু হয়ে চলে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত।

এসময় নারিকেল বাড়িয়া ও দুবলার চরসহ বিভিন্ন চরে জেলেরা অবস্থান করায় দস্যুদের চাদাবাজি করতে তেমন কষ্ট হয় না। শুটকির মোসুম চললেও দস্যু আতঙ্কে নারিকেল বাড়িয়া চরে নেই আগের মত রমরমা অবস্থা। এই চরের জেলেদের  কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক এখন রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী। জেলে পল্লীতে গুলি করতে করতে প্রবেশ করে এই বাহিনী। এই বাহিনীকে চাঁদা না দিলে জেলেদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে দিতে হয় চাঁদা।

নারিকেলবাড়িয়া জেলে পল্লীর জেলে স্বপন বিশ্বাস জানান, জলদস্যুরা জেলে পল্লীতে এসে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের বাড়ির দিকে কান্নাকাটির রোল পড়ে যায়। পরে বাড়ি থেকে টাকা এনে জলদস্যুদের দিয়ে তাদের লোক ছাড়িয়ে আনতে হয়।

এই পল্লীর জেলে আজিজুল দস্যুদের অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে জানান, বেশ কিছুদিন আগে রেজাউল বাহিনী এক জেলেকে ধরে নিয়ে বরফ চাপা দেয়। এরপর তাকে টাকা পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়।

তিনি আরো জানান, তাকে ধরে নিয়েও দস্যুরা মারধর করে। তিনি একপর্যায়ে পানি ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে আসেন।

রেজাউল নামের আরেক জেলে জানান, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বনদস্যু রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনী এই চরের জেলেদের উপর হামলা চালায়। এসময় বনদস্যুদের ধরতে ওঁৎ পেতে থাকা র‌্যাবের সাথে বনদস্যুদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে এক র‌্যাব সদস্য ও এক জেলে গুলিবৃদ্ধ হন।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে  শীর্ষ বাহিনীর প্রধান রেজাউল ওরফে শীর্ষ সহ ৮-১০ জন গুলিবৃদ্ধ হয় ।

র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধের সময় দস্যুদের শীর্ষবাহিনীর নৌযানে অপহৃত দুই জেলে ছিল। তারা হলেন বেল্লাল মাঝি ও নুরুলমাঝি। এরা জানান, বন্দুকযুদ্ধের সময় দস্যুদের নৌযানে ১৯ জন দস্যু ছিল।এদের মধ্যে বাহিনী প্রধান রেজাউলের বুকে গুলি লেগেছে। এছাড়া আরো ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধ  হয়েছে। তাতে রেজাউল মারা গেছে। এরপর একপর্যায়ে গাছের সাথে র‌্যাবের নৌযান বেধে গেলে দস্যু কিছুর গিয়ে  বনের ভিতর গুলিবিদ্ধ রেজাউলকে নিয়ে প্রবেশ করে। যে ভাবে গুলি লেগেছে তাতে রেজাউল সহ অন্তত তিন চারজন মারা গেছে।

২৪ জানুয়ারি যে এলাকায় তারা (দস্যুরা) নেমে বনের ভিতর প্রবেশ করে ওই এলাকায় বন্দুক যুদ্ধের পর উদ্ধার হওয়া ওই দুই জেলে এবং বাগেরহাট ইনফো ডটকমের আরিফ সাওন ও অলীপ ঘটককে সাথে নিয়ে তল্লাসি চালিয়ে ৬ টি আগ্নেয়ান্ত্র ও ৫১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

দস্যু দমনে র‌্যাবের ভুমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন র‌্যাবকে অভিনন্দন জানান। একই সাথে র‌্যাবকে আরো বেশি অভিযান প্ররিচালনার অনুরোধ জানান তিনি বলেন,পূর্ব সুন্দরবনে র‌্যাবের অভিযানের ফলে দস্যুতা অনেকটা কমে এসেছে। তবে পশ্চিম সুন্দরবনে কয়েকটি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

র‌্যাব -৮ এর উপ অধিনায়ক মেজর আনোয়ারুল কবীর বলেন, গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় র‌্যাব-৮ এর অভিযানের ফলে দস্যুতা অনেকটা কমে গেছে। ২০ টি বাহিনীর এখন ফরহাদ,জাহাঙ্গীর বাহিনী সহ ৭ টি বাহিনী রয়েছে। ১৯ জানুয়ারির র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে রেজাউল ওরফে শীর্ষ বাহিনীও শেষ হয়ে গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। শিঘ্রই সুন্দরবনের দস্যুদের সমূলে নির্মূল করার আশ্বাস দিলেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

সুন্দরবন দস্যু মুক্ত হলে মৎস সম্পদের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর ঘুরে দাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।

২৭ জানুয়ারি ২০১৪ :: হেড অফ নিউজ,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআই হক-নিউজরুম এডিটর/বিআই

About ইনফো ডেস্ক

Exit mobile version