প্রচ্ছদ / খবর / ২১ জুন, কবি রুদ্রের প্রয়াণ দিবস

২১ জুন, কবি রুদ্রের প্রয়াণ দিবস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

… থামাও মৃত্যুর এই অপচয়, অসহ্য প্রহর
স্বস্থির অস্থিতে জ্বলে মহামারী বিষন্ন অসুখ,
থামাও, থামাও এই জংধরা হৃদয়ের ক্ষত …

মৃত্যুর এই অপচয় সত্যি নির্মম। আবার চাইলেও থামানো যাবে না। থামানো না গেলেও সময়ের বড্ড আগে চলে গেলেন তিনি। কে জানত মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই পৃথিবীর মায়া জাল ছেড়ে যাবেন।

rudra-banarআজ ২১ জুন, তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের এই দিনে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা ভাষায় অসামান্য এই কবি।

কবি রুদ্র ছিলেন আবহমান বাংলার অস্তিত্ব সংগ্রামের দহন থেকে উঠে আসা, মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। কবিতায় তার শিল্পমগ্ন উচ্চারণ রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি।

অকাল প্রয়াত (১৯৫৬-১৯৯১) কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য।

একাত্তর পরবর্তী বাঙালির জাতীয় আকাক্সক্ষার পরাজিত বিক্ষোভগুলি তার কবিতাকে ধারণ করে মূর্ত হয়ে ওঠে। তাই তার কবিতা আর সবার কবিতার থেকে ব্যতিক্রমী। স্বদেশের বিপন্ন সময়ের বিরুদ্ধে তার কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে প্রতিরোধের ভাষা।

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি শতাধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’ কিম্বা ‘বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে/ রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ’। 

যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। আবার তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।

কবি রুদ্রের ২৬ তম প্রয়াণ দিবস স্মরণে বুধবার (২১ জুন) বিকালে তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালিতে শোভাযাত্রা সহকারে কবির করবে পুস্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও ইফতার আহফিলের আয়োজন করেছে রুদ্র স্মৃতি সংসদ, মিঠেখালি।

রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও কবির ছোট ভাই সুমেল সারাফাত বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে এই অনুষ্ঠানের বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর (২৯ আশ্বিন) বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। ১০ ভাই-বোনর মধ্যে রুদ্র ছিলেন সবার বড়।

তাঁর শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানা বাড়ি মিঠেখালি গ্রামে। সেখানকার পাঠশালাতেই শুরু হয় কবির পড়াশুনা। 

নাতিদীর্ঘ জীবনে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রচনা করেন ৭টি অত্যুজ্জ্বল কাব্যগ্রন্থ- ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭),  ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।

তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক, প্রেম ও দ্রোহের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সবার কাছে তার সঙ্গীতের জন্যও সমান ভাবে জনপ্রীয়। তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, ‘আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’-সহ অসংখ গান দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়।

আজ কবি নেই। আছে তার লেখনী, কবিতা, গান। আর সেই শব্দে উচ্চারণে কবি রুদ্র বেঁচে থাকবেন চিরকাল।

এসআইএইচ/এসআই/বিআই/২১ জুন, ২০১৬

About ইনফো ডেস্ক

Exit mobile version