বাগেরহাটের মংলায় সুন্দরবন সংলগ্ন একটি গ্রামে সংগীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিলের প্রতিষ্ঠান ‘যাত্রা’র চার কর্মীকে আটক করে হয়রানি ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংগীতশিল্পী আনুশেহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা, পুলিশ ও কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।
পহেলা এপ্রিল (বুধবার) রাতে মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মণি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঘটনাস্থালে (জয়মণি) গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ডিসেম্বরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির পর আনুশেহ নিজ উদ্যোগে বর্জ্যতেল ও অন্য আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে আসছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান যাত্রা’র দুই পুরুষ ও দুই নারী কর্মী জয়মণির ঘোল এলাকায় শ্রমিকদের দিয়ে ওই কাজ করাচ্ছিলেন। পাশাপাশি গ্রামের নারীদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন।
যাত্রা’র ওই চার কর্মী স্থানীয় চিলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মালেক ফরায়েজীর বাড়িতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দু’জন জেলে বাগেরহাট ইনফোকে জানান, বুধবার যাত্রার চার কর্মী বন বিভাগের লঞ্চঘাটে ঘুরতে যান। স্থানীয় কয়েক যুবক তাঁদের চলাফেরা ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং পরে তা আওয়ামী লীগের নেতা ওলি সরদার ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রনি গাজীকে জানান।
ওই দুই নেতা তাদের চারজনকে জয়মনি বাজারে ডেকে পাঠান। এসময় যাত্রার ওই চার কর্মী সেখানে যেতে রাজি না হলে বাজারের দুই শতাধিক লোককে উসকে দিয়ে এই চারজনকে বাজারে ডেকে এনে লাঞ্ছিত করেন ওই নেতারা।
এক পর্যায়ে যাত্রার এই চার কর্মী নিরপত্তা গ্রহনের উদ্দেশ্যে বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনের কাছে যান। তিনি তাদেরকে জয়মনি নৌ পুলিশ ফাড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের কাছে পাঠান
নজরুল স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তাদেরকে রাত ৯ টার দিকে তাদের বাড়ীতে পৌঁছে দেন।
ইউপি সদস্য ও ওই চার যাত্রা কর্মীর ভাড়া বাসার মলিক আবদুল মালেক ফরায়েজী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ওই দিন রাত ১০টার দিকে ফাঁড়ির উপপরিদর্শকসহ চার পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে রনি বাড়িতে এসে যাত্রার কর্মীদের গালাগাল করেন এবং ভয়ভীতি দেখান।
এরপর জি টিভি, মাই টিভি, বাংলাভিশন, সময় টিভি ও দেশ টিভির মংলা প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। তারাও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। পরে একটা মোটা অংকের টাকা তারা নিয়ে ওই চারকর্মীকে এখান থেকে চলে যেতে বলেন। রাত তিনটার দিকে ওই চার কর্মী তাদের গাড়ীতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে জয়মনি ত্যাগ করেন।
তারা বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্যে আমাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই ঘটনা আমাদের জয়মনি গ্রামের সম্মান একেবারে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে রনি গাজীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে ওলি সরদার বলেন, ‘এই চার কর্মী অসামাজিকভাবে লঞ্চঘাটে ঘোরাফেরা করছে বলে কিছু তরুণ আমাকে জানালে আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পরে বাজারের কিছু মুরব্বি তাদের পোশাক-আশাক ও চলাফেরা নিয়ে কিছু কথা বলেন। তারপর তারা বাড়ীতে চলে যায়। রাতে কী হয়েছে, আমি জানি না।’
জয়মনি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও জনতা যাত্রার চার কর্মীরা বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ করেছিলেন। আমরা সে বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করি।
আর রাতে সাংবাদিকেরা যখন আসেন, তখন আমরা টহল দিচ্ছিলাম। সাংবাদিকেরা রাত সাড়ে ১২টায় চলে যান। অর্থের লেনদেন হয়েছে কি না, আমি দেখিনি।’
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ওই রাত্রে যাত্রার কর্মীদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক ও নেতারা।
আনুশেহ বলেন, ‘প্রথমে আমরা জয়মণি গ্রামে তেল ও সংশ্লিষ্ট বর্জ্য অপসারণের জন্য গিয়েছিলাম। তেল অপসারণের পর তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করেছিলাম। দীর্ঘদিন কাজ করার পর বুঝতে পারি অভাবের তাড়নায় সেখানকার মানুষই অবৈধভাবে বনের গাছ কেটে, মাছ মেরে এবং পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।’
‘তাই তাদের অনেক সময় প্রশাসনিক হেনস্তার শিকার হতে হয়। এছাড়া তাদের এই কাজ পরিবেশকেও তো প্রভাবিত করছে। তাদের এই কাজ থেকে ফেরাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আমরা।’
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More