সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপির ভিত্তিতে দেশের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বাগেরহাটের মংলায়।
সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক পিপিএমকেপিপিএল জেভি ২০৫ একর জমির ওপর এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে বলে খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য পাওয়ার প্যাকের অনুকূলে প্রাকযোগ্যতা লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
২০১৮ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সরকার ও পাওয়ার প্যাকের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদারের হাতে প্রাকযোগ্যতার লাইসেন্স তুলে দেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বেজার নির্বাহী সদস্য এস এম শওকত আলী, প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ২০১০ সালে বেজা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাঁচ বছর পর এই প্রথম পিপিপির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যাত্রা শুরু হলো। যদিও বেসরকারিভাবে এরই মধ্যে দেশের চারটি স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, পিপিপির নিয়ম অনুযায়ী, মংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমির ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধাও দেওয়া হবে সরকার থেকে। আর পাওয়ার প্যাক অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীকে আমন্ত্রণ জানাবে।
তিনি বলেন, বাগেরহাটের মংলায় বেজার মালিকানায় একসঙ্গে ৩১৫ একর জমি আছে। এর মধ্যে ২০৫ একর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য পাওয়ার প্যাককে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১১০ একর ভারতের বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। পাওয়ার প্যাককে যে পরিমাণ জমি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বেজার পক্ষ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে মাটি ভরাট, সংযোগ সড়ক, সেতু, দেয়াল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার ও ব্যক্তিখাতের যৌথ উদ্যোগের অগ্রযাত্রায় এটি প্রথম ধাপ। পিপিপির মাধ্যমে দেশে প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয়েছে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে।
তিনি বলেন, দেশে অন্তত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এর পাশাপাশি প্রত্যেক জেলায় একটি করে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। যেসব দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী জমির জন্য বসে আছেন, তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য ভারত দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাগেরহাটের মংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জমি চেয়েছে।
সেখানকার অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ভারতের হাইকমিশন থেকে। তাদেরকে জমির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আলোচনা চলছে। মংলা ও ভেড়ামারায় বাড়তি জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের কাছে ৭০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) বিনিয়োগকারীরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে তার চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য আমদানি শুল্কও মওকুফ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রত্যেক অর্থনৈতিক অঞ্চলে বন্ডেড ওয়্যার হাউস থাকবে বলে জানান তিনি। বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপার তাদের বিনিয়োগের ওপর আয় শুরুর পর থেকে কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। বর্তমানে ৩৬ খাতে কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে।
বেজার কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গভর্নিং বোর্ডের সভায়। আর আটটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ছাড়া বেসরকারিভাবে চারটি স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একে খান গ্রুপ নরসিংদীতে, আবদুল মোনেম মুন্সীগঞ্জে, বিজিএমইএ মুন্সীগঞ্জে এবং মেঘনা গ্রুপ নারায়ণগঞ্জে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ শুরু করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। সেখানে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি মানুষের। আর সেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে প্রতি অর্থবছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হবে।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More