সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাংলার উৎসব, বাঙালির চিরায়ত উৎসব – পহেলা বৈশাখ; বাংলা নববর্ষ। নানা আয়োজনে বাংলা নতুন বছর ১৪২৪ কে বরণ করেছে বাগেরহাটবাসী।
বর্ষবরণ উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম চত্বরে।
সকালে বাগেরহাট স্টেডিয়াম থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা পরিষদ মাঠে এসে শেষ হয় যাত্রা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী এ শোভাযাত্রায়।
স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম মাঠে বৈশাখী মেলার পাশাপাশি স্বাধীনতা উদ্যানে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বর্ষবরণ উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী এই আয়োজনে স্বাধীনতা উদ্যানের বিজয় মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
অনুষ্ঠান সূচিতে রয়েছে- গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া লালনগীতি, পল্লীগীতি, যাত্রাগান, পালাগান, পটগান, জারিগান, কবিগান ও পদাবলী কীর্ত্তণ গান। পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে এসব অনুষ্ঠান।
এছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী হাডুডু ও লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সব মিলে বাংলা বছরের প্রথম দিনটি উৎসবের রঙ ছড়িয়েছে সবার মনে। রঙিন সাজে আর বর্ণিল পোশাকে নারী-পুরুষ, শিশু সবাই মিলে স্বাগত জানাচ্ছেন বাঙলির সার্বজনীন উৎসবকে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এ বছর থেকে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো গত বছরের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
যেভাবে শুরু হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা
১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিত ভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়ে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম বের হয় যশোরে, ১৯৮৫ সালে। সেখানেও চারুকলার শিক্ষার্থীরা এতে জড়িত ছিলেন।
চারুকলা অনুষদের ডিন ও শোভাযাত্রা শুরুর অন্যতম উদ্যোক্তা নিসার হোসেন ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী জানান, ১৯৮৫-৮৬ সালের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা। তারা ১৯৮৮ সালের বন্যায় কিছু কাজ করেছিল। সেই সময় তাদের চারুশিল্পী সংসদ সহায়তা করেছিল। শিক্ষকেরা পেছনে ছিলেন, কিন্তু সব কাজ হয়েছে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে।
শোভাযাত্রাকে শোভিত করার জন্য যে উপাদানগুলো লাগে, সেগুলো শুরু থেকেই নেওয়া হয় দেশের লোকশিল্পের নানা ধরনের খেলনা থেকে। এর বাইরে ঘোড়া, নকশিপাখা, ফুল, প্রজাপতি, মানুষ, প্রকৃতি এগুলো শোভাযাত্রায় স্থান পেতে থাকে।
ইউনেসকোর স্বীকৃতি
ইউনেসকো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে মূল্যায়ন করেছে অন্যায় ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষের সাহসী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে। ধর্মবর্ণজাতিলিঙ্গ-নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের একই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের বিষয়টিও ইউনেসকোর এই স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
ইউনেসকো ২০০৩ সালে সারা বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’, অর্থাৎ মনোগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণের জন্য একটি সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন করে। এর আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনোগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতি চেয়ে ইউনেসকোতে আবেদন করে। স্বীকৃতি দেওয়ার মূল কাজটি করে ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’। কয়েক ধাপ পর্যালোচনার পর ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত কমিটির একাদশ সম্মেলনে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এজি/এইচ//এসআই/বিআই/১৪ এপ্রিল, ২০১৭
** নব রূপে এসো প্রাণে
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More