স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের ফকিরহাটে একটি বেসরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিশুটির পরিবার। এ ঘটনায় ১০ জুলাই উপজেলার পরিত্রাণ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা শাহ জাহান হাওলাদার।
আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তা পরিচালনা করতে একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। মামলার পরবর্তি শুনানী হবে ১০ আগষ্ট।
ওই ক্লিনিক কর্তিপক্ষের শাস্তি দাবি করে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের শাহ জাহান হাওলাদার।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী দ্বিতীয়বারের মত সন্তান সম্ভববা হলে গত ২৭ মে তাকে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তার স্বাভাবিক ডেলিভারীতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় এবং হাসপাতালে সিজারের (অপারেশন) ব্যবস্থা না থাকায় ভোর রাতে পাশের ‘পরিত্রাণ ক্লিনিক’ নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাই।
ক্লিনিকের পরিচালক ফাতেমা বেগম তাকে দেখে স্বাভাবিক প্রসব (ডেলিভারী) হবে বলে আশ্বস্ত করেন এবং ভর্তি নেন। ভর্তির পর আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে আমি ফাতেমা বেগমকে ডাকতে গেলে তিনি আমার সাথে দূর্বব্যবহার করেন। পরে ক্লিনিক মালিক দম্পতি ফাতেমা বেগম ও তার স্বামী ডা. মোস্তফা হাসান দু’জন মিলে আমার সন্তান সম্ভববা স্ত্রীকে স্বাভাবিক ডেলিভারীর চেষ্টা করেন।
এতে আমর স্ত্রী লাকি ময়না বেগম গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। স্বাভাবিক ডেলিভারিতে ব্যর্থ হয়ে ২৮ মে সকালে ক্লিনিক মালিক দম্পতি চিকিৎসক উদয় বরণ মন্ডলকে ডেকে এনে আমার স্ত্রীর অপারেশন (সিজার) করান।
আদালতে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডা. উদয় বরন মণ্ডল সিজারের আগে আমার স্ত্রী লাকি বেগমের শারীরিক অবস্থা দেখে ক্লিনিক পরিচালককে গাল মন্দ করে বলে, রোগীতো এখন প্রায় মৃত্যু পথযাত্রায়। এই মুহুর্তেই সিজারের ব্যবস্তা কর।’
সিজারের পর আমার স্ত্রী সুস্থ থাকলেও সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ক্লিনিকের ডা. মোস্তফা হাসানের কাছে গেলে তিনি আমাকে গালি দিয়ে বলে, ‘তোমার গোষ্টি শুদ্ধ চিকিৎসার দায়িত্ব আমি নেই নাই, শুধুমাত্র সিজারের কন্টাক করেছি। বাচ্চা নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যা।’
এতে নিরুপায় হয়ে বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে আমার নবজাতক শিশুকে সংকটাপন্ন অবস্থায় খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ মে রাত পৌনে ৪টায় আমার শিশু সন্তান মারা যায়।
মস্তিস্কে অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য প্রদাহ ও মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সন্তানহারা নবজাতকের মা লাকি বেগমসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন ও মামলায় শাহ জাহান হাওলাদার বলেন, নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর মাথা ধরে টানা হেচড়া করায় মস্তিস্কে রক্তপাত আমার শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পরিত্রাণ ক্লিনিকের পরিচালক ফাতেমা বেগম বলেন, সন্তান সম্ভববা ওই নারী ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। সেখানে অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোর রাতে আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি হন। রোগীর স্বামী ও পরিবারের লোকজন সিজার করতে আপত্তি করায় আমরা স্বাভাবিক ডেলিভারির চেষ্টা করি। কিন্তু তা না হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে সিজার করানো হয়।
রোগী বা তার কোন স্বজনের সাথে ক্লিনিকের কেউ কোন প্রকার দূরব্যবহার করেনি দাবি করে তিনি আরও বলেন, শিশুটি জন্মের দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনায় মারা যায়। আমাদের ক্লিনিকে শিশুটির কোন চিকিৎসা করা হয়নি; তার চিকিৎসা হয় খুলনায়। এখানে আমাদের কোন গাফিলতি নেই।
আমাদের ক্লিনিকে সিজারের এক সপ্তাহ পর লাকি বেগম সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরেন।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বেসরকারি ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচ//এসআই/বিআই/১৩ জুলাই, ২০১৭
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More