পুলিশের হাতে আটকের পর ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডাব্লিউ) বাগেরহাট কারাগারে আসার আগেই জামিনে মুক্তি পেলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম তালুকদারের (৪৭)।
বাগেরহাট আমলী আদালত-৩ এর জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো: জিয়ারুল ইসলাম গত ১৯ অক্টোবর সেলিম তালুকদারের জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে সেলিমকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেন।
এর আগে ১২ অক্টোবর ওই শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী জাহানারা বেগম ঢাকার হাজারীবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক) ধারায় একটি মামলা করেন। এর পর হাজারীবাগ থানা থেকে পাওয়া অনুসন্ধান স্লিপ (আই.এস.) মোতাবেক বাগেরহাটের কচুয়া থানা পুলিশ ১৫ অক্টোবর সেলিম তালুকদারকে গ্রেফতার করে। কচুয়া উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে গ্রেফতারের পর ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে বাগেরহাট আদালতে পাঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে গ্রেফতারের এক সপ্তাহ পারও ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ। ফলে এখনও ঐ পদে বহল হয়েছেন সেলিশ তালুকদার।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘সেলিম তালুকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করায় পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও ঢাকাস্থ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের মহা-পরিচালককে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছি। তার বিরুদ্ধে গৃহিত ব্যবস্থা বিষয়ে কোন নির্দেশনা এখনও আসেনি।’
এদিকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডাব্লিউ) বাগেরহাটে পৌছানোর আগেই গ্রেফতারর মাত্র ৯৬ ঘন্টার মধ্যে মামলার এজাহার নামীয় একমাত্র আসামী সেলিম তালুকদার জামিনে মুক্তি পাওয়ায় ক্ষোভ ও শংকা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী জাহানারা বেগম।
জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন,‘আসামী সেলিম তালুকদার এখন বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার ভাই-বোনদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসসহ তার পরিচিত প্রশাসনিক মহলকে প্রভাবিত করে অসুস্থতার প্রত্যায়নপত্র তৈরীর চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছি। এ ধরণের প্রত্যায়ণপত্র উপস্থাপন করে তিনি আদালতে হাজির না হয়ে সময় ক্ষেপন করার সুযোগ পেলে বিচারপ্রার্থী হিসেবে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হবো।’
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জামিনের পর সেলিম এখন ঢাকায় রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ওই অফিসের এক কর্মকর্তাকে একটি প্রত্যায়ণত্র প্রদানের জন্য তিনি অনুরোধ করেন এক বার ফোনও করেছিলেন।
তবে প্রত্যায়ণপত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায় নি।
সরজমিনে বাগেরহাট আদালতে খোঁজ নিয়ে ও এই মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেলিম তালুকদার গ্রেফতার হবার পর আসামীপক্ষ অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচারকের কাছ থেকে জামিনের নির্দেশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। নথি অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর কচুয়া আমলী আদালত আগামী ২৭ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তি শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেন। আসামী পক্ষ পরদিন ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পুনরায় জামিন আবেদন দাখিল করলে আদালত এক আদেশে ঐ আবেদন নামঞ্জুর করে বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা এবং আই.এস. বিদ্যমান থাকায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর।
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুক্র ও শনিবার সরকারী ছুটির পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গত ১৯ অক্টোবর রোববার আসামীর পক্ষে আবারও জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক ঐদিন জামিন আবেদন মঞ্জুর করে দেয়া আদেশে বলেন, আসামী সরকারী কর্মকর্তা। আজ (১৯ অক্টোবর) থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে আসামীকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করে ইনফর্মেশন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া গেল।
আসামীর আইনজীবী ও কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় কুড়ি হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মজিবুর রহমান বিকেলে মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘আদালত সেলিম তালুকদারের আইনজীবী এবং আমার জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করে তাকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেলিম এখন কোথায় আছেন তা আমি জানি না।’
মামলার অগ্রগতি ও জামিন প্রসঙ্গে জানতে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো: শরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ মামলার একমাত্র আসামী বাগেরহাট কারাগারে আটক আছেন। তাকে ঢাকার আদালতে আনতে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চেয়ে আবেদন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট বাগেরহাটে পৌছাবে।’
তবে বাগেরহাট আদালত হতে আসামীর জামিন বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More