গোটা বিশ্বের বড় বড় চোখ তাকিয়ে আছে সুন্দরবনের দিকে। কী হচ্ছে সুন্দরবনে। বনের ভিতর তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির পর সুন্দরবনে জীব বৈচিত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা এখনও কাটছে না।
কিন্তু যাকে নিয়ে এত হৈ চৈ সেই তেলের ট্যাঙ্কার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নাকি এক সময় বালু ও পাথর টানার কাছে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্করটির তেল টানারমত ফিটনেসও ছিলো না।
ট্যাঙ্কারটিকে আসলেই কী ‘ওটি টোটাল’ ধাক্কা দিয়ে ছিলো তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে পরিবেশ বাদীরা বলছেন এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। বিষয়টি সরকার অধিকতর তদন্ত করে ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
তবে এ বিষয়ে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসেন চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন- তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে কিছুই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ’ আসলে ছিলো বালু ও পাথর টানার কার্গো। এর মূল মালিক ছিলেন মানিক গঞ্জের আরিচা এলাকার শিল্পপতি রহিম খাঁন। তিনি ‘আল-মামুন’ নাম দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও মেঘনা রুটে এটি পাথর টানার কাজে ব্যবহার করতেন। এর কিছু দিনপর তার মত পরিবর্তন করে কার্গোটিকে ‘ওটি আল মামুন নাম’ দিয়ে ডিপু থেকে তেল ক্রয় করে বিভিন্ন নৌযানে সরবরাহ করতেন। পরে ট্যাঙ্কারটি নাজুক অবস্থা তৈরি হলে বিক্রির সিদ্ধন্ত নেন রহিম।
সেই সুযোগে সস্তায় বর্তমান সরকারের প্রভাশালী এক মন্ত্রীর নিকট আত্মীয় (শালা) আমীর হোসেন ‘ওটি আল-মামুন’ ট্যাঙ্কারটিকে ক্রয় করেন। পরে তিনি ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নাম দিয়ে খুলনা থেকে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে ভোলা পাওয়ার প্লান্টে তেল টানার কাজে ব্যবহার করা শুরু করেন।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রিয় প্রচার সম্পাদক মো. কাশেম মাষ্টার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান- ট্রাংক রুট (বড় নৌরুট) দিয়ে তেলের ট্র্যাঙ্কার চলতে হলে সার্ভে এবং রেজিট্রেশন সার্টিফিকেট অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়া মাষ্টার ড্রাইভার দক্ষ এবং দক্ষতার সনদ থাকতে হবে। তেল পরিবহনের জন্য বিষ্ফরক সার্টিফিকেট থাকতে হবে। রাডার, জিপিএস, ভিএইচএফ, থাকতে হবে । আগুণ নিভানোর জন্য পরিপূর্ন সরঞ্জাম থাকতে হবে। জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকতে হবে। ট্যাঙ্কারে বডি ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। যা প্রকাশ্যে ঝুলানো থাকতে হবে।
অভিযোগ উঠেছে এই বড় রুট দিয়ে তেল টানার জন্য যে ধরণের ফিটনেস দরকার তা ছিলো না ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ এর ।
তবে এ ব্যাপারে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ এর মালিক আমীর হোসেন ফরিদের সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তার পক্ষে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ এর সুপার ভাইজার ওলি উল্ল্যা মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন- আমি ট্যাঙ্কারটিতে কেনার পর থেকে গত তিন বছর ধরে আছি। আমাদের কাগজ পত্র ফিটনেস সবই আছে। ‘ওটি টোটাল’ ধাক্কা দিয়ে ট্যাঙ্কারটিকে ডুবিয়ে দিয়েছে।
তবে ‘ওটি টোটাল” ট্যাঙ্কারটির সাথে সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন ক্ষমতার দাপটে তাদেরকে ফাঁসানো হচ্ছে।
গত সোমবার দুপুরে ‘ওটি টোটাল’ এর মাস্টারসহ ৪ জনকে আটক করেছে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- এমটি টোটালের মাস্টার মোস্তফা, ট্যাংকারের কর্মচারী ফারুক, আক্কাস এবং পিয়ার আলী। পরে মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে মংলা থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ সময় তাদের সাথে থানায় কথা হয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের এক নেতার ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।
তিনি বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে উদ্বৃতি দিয়ে জানান- গ্রেফতার হওয়া ‘ওটি টোটাল’ ট্যাঙ্কারের চারজন থানায় কান্নাকাটি করেছেন। তারা বলছেন আমরা কিছুই জানি না । শ্যালা নদীতে ওই সময় ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ এর পাশে আমরাও নোঙ্গর করে ছিলাম।
ডুবে যওয়ার পর কয়েকজন নৌকায় করে এসে আমাদের নাম লেখে নিয়ে যান। আমাদেরকে ফাঁসনো চেষ্টা হচ্ছে। ‘ওটি টোটাল’ এর মালিক নরসিন্ধির -৩ এর এমপি ও প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ।
গ্রেফতার কৃতদের ব্যাপারে মংলা থানার ওসি বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান- ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ এর পরিচালক গিয়াস উদ্দিনের দায়ের করা মামলায়( ধারা ২৮০/৪২৭/২৮০) তাদেরকে মঙ্গলবার দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা দোষ স্বীকার করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
গত মঙ্গলবার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের একটি ট্যাংঙ্কার গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে শ্যালা নদীতে ডুবে যায়। এ ঘটনায় ওটি টোলাল নামে আরেকটি তেলের ট্যাঙ্কারকে দ্বায়ী করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ট্যাঙ্কারটিকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ৫ দিনপর নৌযানটির নিখোঁজ মাস্টার মোখলেসুর রহমানের (৫০) লাশ উদ্ধার হয়।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More