
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার সিরাজ মাস্টার, তার দুই সহযোগী খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সোমবার প্রথম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন।
এসময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের আইনজীবী এম সারওয়ার হোসেন এবং সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান।
প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক জানান, প্রথম দিন আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে চারটির বিষয়ে সাক্ষীদের দেওয়া সাক্ষ্য ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের বিষয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাকি তিনটি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ৭ জুন আসামিপক্ষের আইনজীবীদের করা এক সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিতর্কের তারিখ পিছিয়ে সোমবার পুনর্নির্ধারণ করেছিল ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামি পক্ষে পাঁচজন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন- মো. আমজাদ শেখ, সরদার আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ মল্লিক, ইউসুফ আলী দিহিদার ও মো. ফেরদৌস খান।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ, লতিফ ও আকরামের বিরুদ্ধে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ মোট ৩২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
গতবছরের ৫ নভেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত অভিযোগে অভিযুক্ত করে বাগেরহাটের আব্দুল লতিফ তালুকদার, শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেনের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে যৌথভাবে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। আগের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর সাইয়্যেদুল হক সুমন ও শেখ মুশফিক কবির তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার জামিন চাইলেও তা নাকচ করে দিয়ে সেদিন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আবুল আসাদকে আইনজীবী নিয়োগ দেন বিচারক।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারীকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।
ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে কচুয়া থানা পুলিশ গত ১১ জুন লতিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ১৯ জুন আকরাম হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহী থেকে। ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হন সিরাজ মাস্টার।
প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা বলছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।
খুলনার আনসার ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তারা অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের সঙ্গে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ চালায় বলে তদন্ত সংস্থার অভিযোগ।
গতবছর ২৫ অগাস্ট এ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এদের বিরুদ্ধে ৯টি খন্ডে মোট ৮শ’ ৪৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এদের বিরুদ্ধে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা।
সূত্র – বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More