বন্দর শহর মংলা এবং শহরতলীর অলী-গলিতে ক্রমশই বেড়ে চলেছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা। সন্ধ্যা নামলেই তাদের অবাধ বিচরণ শুরু হয় শহরতলীর অন্ধকার গলিতে।
অভিযোগ আছে, রাতভর চলে বিকিকিন ও মাদক সেবনের মহোৎসব। এ নিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ভূমিকাতেও আছে প্রশ্ন।
ফলে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের দাপটের কাছে পরিবার পরিজন নিয়ে দারুন অসহায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মংলার পূর্ব কবরস্থান রোড, কমিশনার হালিম সড়ক, রাতারাতি কলোনী, বালুর মাঠ, ছাড়া বাড়ি, পরিত্যাক্ত পোট হেলথ কমপ্লেক্স, ফেরীঘাট, মাদ্রাসা রোড়, নদী সংলগ্ন বেড়িবাধে গড়ে উঠেছে দেশী (বাংলা) মদসহ বিদেশী বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ বিয়ার, গাজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ হরেক রকম মাদক সেবন ও বিকিকিনির একাধিক আস্তানা।
দিনের আলো গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই এ সব স্থানে শুরু হয় উঠতি বয়সের কিশোর ও মাদকাসক্ত বখাটেদের আনাগোনা। বিশেষ করে মংলার বস্তিগুলোতে বেড়ে চলেছে মাদক আসক্তের সংখ্যা। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বস্তির নেশাগ্রস্থ বখাটে ছেলেরা আশেপাশের মহল্লার অন্ধকার সড়কে ঢুকে পড়ে। সেখানে মাদক সেবন এছাড়াও দলবদ্ধ ভাবে ঘুরে বেড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরে একটি দেশী (বাংলা) মদ ও একটি কেরু কোম্পানীর লাইসেন্সধারী দোকান থাকলেও এর বাইরেও চলছে অবৈধ মদ বিচিকিনির রমরমা কারবার। শহরতলীর কাইন নগরের বাইদ্যা পাড়া এলাকায় গড়ে ওঠেছে বিদেশী মাদকের বড় আস্তানা।
বিদেশী বিভিন্ন জাহাজ থেকে সংঘবদ্ধ মাদক পাচারকারীরা বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ ও বিয়ার জাহাজ থেকে নামিয়ে এনে এখানে মজুদ করে রাখে। পরে সুবিধা মতো সময়ে তা মংলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে দেয়।
এ ছাড়া শহরের কয়েকজন প্রভাবশালী কিছু যুবক ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। খুলনা থেকে এসব ইয়াবা মংলায় এনে তা যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, উপজেলার দিগরাজ বাজার এলাকায় গড়ে ওঠেছে সংঘবদ্ধ ফেন্সিডিল পাচারকারীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুন্দরবনের নৌ পথ দিয়ে ফেন্সিডিল পাচার করে এনে তা এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে, সংঘবদ্ধ মাদক আসক্ত ও বখাটেদের দাপটের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোন সুফল মেলেনি। উল্টো মাদকাসক্তদের তৎপরতা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
মংলা থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন সময় মাদক দ্রব্যসহ কিছু মাদকসেবী এবং ব্যবসায়ীরা আটক হলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে দ্রুতই তারা জেল থেকে বেরিয়ে আসছে। আবার পূণরায় জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়।
তবে, শহরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি অফিস থাকলেও মাদক নির্মূলে তাদের তেমন বড় ধরনের কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু’ চার পুরিয়া গাজা ও সেবনকারী আটক ছাড়া সাম্প্রতিককালে তাদের বড় ধরনের কোন উদ্ধার বা আটকের ঘটনা নেই।
তাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন আছে সচেতন মহলে। তাদের আরো বেশি নিষ্ক্রিয়তা অভিভাবকদের সঙ্কিত করে তুলছে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: বেলায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাদক বিকিকিনি ও আসক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের অব্যাহত অভিযান চলছে।
অপরদিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মংলা সার্কেলের পরিদর্শক জাফরুল আলম নিজেদের নিস্ক্রীয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জনবল ও যানবাহনের সংকটের কারণে তাদের অভিযানে বেগ পেতে হয়। তার পরেও তারা মাদক নিয়ন্ত্রনে তৎপর রয়েছেন।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More