শেষ পর্যন্ত আদালতে শিশু সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করলেন চিতলমারী উপজেলার চর চিংগুড়ি গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকালে বাগেরহাট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
আদালতে তিনি তার দেড় বছরের মেয়ে মিমরা আক্তারকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়স্বীকার করেন।
মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাটের চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সোমবার রাতে চিতলমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আলম বাদী হয়ে নাজমা ও তার স্বামী রিয়াজ শেখের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ ঐ দম্পতিকে মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়।
|| শিশু কন্যা হত্যা, বাবা-মা গ্রেপ্তার
এক পর্যায়ে স্বীকারোক্তি প্রদাণে সম্মত হলে দুপুর একটার দিকে নাজমাকে বিচারিক হাকিম গৌতম বিশ্বাসের আদালতে নেয়া হয়। দুপুর তিনটা পর্যন্ত দুই ঘন্টা ধরে নাজমা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়ে নিজের ‘মেয়েকে হত্যা’র কথা ‘স্বীকার’ করেন।
জবানবন্দি শেষে মঙ্গলবার বিকালে নাজমা ও তার স্বামী রিয়াজকে বাগেরহাট কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে নাজমা ঠিক কী বলেছে সে বিষয়ে আদালত ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
তবে চিতলমারী থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী এবং মামলার বাদী এসআই ফিরোজ আলম বলেন, আদালতে যাওয়ার আগে নাজমা তার কৃতকর্মের জন্য অনুতাপে ভেঙে পড়েন।
মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে তিনি পুলিশকে বলেন, অর্থাভাব, অশান্তি এবং স্বামী রিয়াজের আবারো বিয়ে’কে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্ক এমন একটি পর্যায়ে পৌছেছিলো যে, মেয়েকে মানুষ করার মত সামর্থ ও মানসিক অবস্থা তার ছিলো না। স্বামীর বিভিন্ন আচরণে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, রিয়াজ শীঘ্রই তাকে ত্যাগ করবেন।
এ অবস্থায় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন নাজমা। স্বামীর উপর প্রতিশোধ নিতেই তিনি তার দেড় বছরের মেয়ে মিমরাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন।
নাজমা ঘটনা সম্পর্কে পুলিশকে বলেন, রোববার রাতে তার স্বামী রিয়াজ রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। তিনিও পৃথক বিছানায় ঘুমাতে যান, কিন্তু ঘুমের ভান করে জেগে থাকেন। তার বিছানায় মেয়ে মিমারা ঘুমিয়ে ছিলো।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তিনি ঘরে থাকা একটি ছুরি দিয়ে মিমারার বুকের ডান দিকে দু’বার আঘাত করেন। এতেই মিমারা মারা যায়। পরে তিনি হত্যার দায় তার স্বামীর উপর চাপাতে ঘর থেকে বাইরে যেয়ে ডাক চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকার চেষ্টা করেন। এ সময় রিয়াজ ঘুম থেকে উঠে পড়ে এবং প্রতিবেশীরাও এগিয়ে আসে।
পরে প্রতিবেশীরা লাশ দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তাদের রাতেই তাদেও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার জন্য ‘অনুতপ্ত’ জানিয়ে নাজমা আদালতে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার ইচ্ছা প্রকাশ করলে নাজমাকে আদালতের কাছে নেয়া হয়।
রোববার গভীর রাতে চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের চর চিংগুড়ি গ্রামে মায়ের কোলে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হয় দেড় বছরের শিশু মিমারা।
পুলিশ এই ঘটনায় মেয়েটির বাবা রিয়াজ ও মা নাজমাকে আটক করে এবং ঐ ঘর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে তারা দু’জন পুলিশের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে মেয়েকে হত্যার অভিযোগ করছিলেন।
এ অবস্থায় পুলিশ বাদী হয়ে সোমবার রাতে ঐ দম্পতির বিরুদ্ধে চিতলমারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, অতি দরিদ্র ঐ দম্পতির বিয়ে হয়েছিলো প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে। মুস্তাইন শেখ নামে তাদের পাঁচ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান আছে। সে নানাবাড়িতে থাকে। বিয়ের পর বিভিন্ন কারেণ তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।
এক পর্যায়ে নাজমা তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন যা বিচারাধীন। এ অবস্থায় কিছু দিন আগে নাজমার স্বামী রিয়াজ আরেকটি বিয়ে করায় তাদের দাম্পত্য কলহ চরমে পৌছায়।
এক ঘরে থাকলেও তারা পৃথক বিছানায় ঘুমাতেন। এই কলহের জেরেই প্রাণ গেলো দেড় বছরের মেয়েশিশু মিমারার।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More