সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় কোটি টাকার বেশি লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঋণ বিতরণের নামে এই অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে।
তবে টাকার অংকের বিষয়ে ওই ব্যাংকের কেউই মুখ খুলছেন না। ঘটনা তদন্তে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের খুলনার জিএম অফিস ও বাগেরহাট রিজিওনাল অফিসের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের আভ্যান্তরিন অডিট চলাকালে ৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট শাখার সিনিয়র অফিসার মাহাফুজুর রহমান লোনের ডকুমেন্ট না দেখিয়ে গা’ঢাকা দিলে অডিট টিমের কাছে সন্দেহ হয়। এর পর থেকে ওই কর্মকর্তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাগেরহাট শাখার লোন ডকুমেন্ট পর্যালোচনা শুরু করেন। এ অবস্থায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড খুলনার জিএম নেপাল চন্দ্র সাহা শুক্রবার বাগেরহাট শাখা পরিদর্শনে আসেন।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানান গেছে, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম লোন থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এর সাথে বাগেরহাট শাখার সিবিএ’র ২-১ জন নেতাও জড়িত রয়েছে নাকি।
দীর্ঘদিন ধরে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই কারসাজির জড়িত ছিল। বাগেরহাট শাখার ওই সিনিয়র কমকর্তা শিক্ষা সঞ্চিয়ী স্কীম, মেডিক্যাল ডিপোজিট স্কীম ও স্থায়ী আমানত স্কীমসহ ব্যাংকে গচ্ছিত বিভিন্ন স্কীমের ঋণ বিতারণের বিষয় দেখতেন।
অপর আর একটি সূত্রে জানা গেছে, মাহাফুজুর রহমান তিন বছর ধরে বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংকের এই শাখায় কর্মরত আছে। প্রায় এক বছর আগে তাকে একবার এখান থেকে বদলি করা হলেও লবিং করে আবারো এই শাখায় ফিরে আসেন। যা বিধি বহিরভূত নাকি।
অভিযোগ আছে, চলতি বছরে মাহাফুজুর রহমান ওরফে বাবু একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এর খুলনা বিভাগের সকল শাখা কিনে নিয়েছেন। অল্প সময়ে বেস কয়েকটি পিকআপ ও মাইক্রোবাস কিনে শহরে রেন্টেকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। হয়তর খান জাহান (রহ.) মাজার মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে তার।
এদিকে, এসব বিষয় নিয়ে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট শাখার একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কিছু বলতে রাজি হননি। তবে আর্থিক অনিয়মের সন্দেহে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খান বজলুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, খান মিজানুর রহামান ও রবিন গাইন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহাফুজুর রহমানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাগেরহাটের হরিণখানায় শেখ মাহফুজুর রহমানের বাসায় গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। বাইরে থেকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
তার মা মরজিনা বেগম বলেন, বাবু (মাহাফুজুর রহমানের ডাক নাম) কোথায় আছে তা আমার জানা নেই। আমরা অডিট কমিটির কাছে লিখিত দিয়েছি যদি সে কোন টাকা নিয়ে থাকে আমরা তা পরিশোধ করব।
সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন আগে ওই শাখায় যোগদান করেছি। ঋণ বিতরণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মাহফুজুর রহমান প্রায় তিন বছর ধরে ওই শাখায় কর্মরত রয়েছেন। আর অডি লোনের ক্ষেত্রে তাঁর আনলিমিটেড চেক পাওয়ার রয়েছে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অডিট দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বাগেরহাটের একটি বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংকের এই শাখায় চেক জালিয়াতি, ভূয়া নামে লোন উত্তলোনসহ আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত প্রয়োজন।
সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট রিজিওনাল অফিসের প্রধান কর্মকর্তা আশুতোষ মন্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, অডিট টিমের কাছে ডকুমেন্ট দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে আত্মীয় মারা গেছে এমন অজুহাত দিয়ে মাহাফুজুর রহমান ওই দিন ব্যাংক ত্যাগ করেন। এর পর থেকে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে এই কমিটি আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে কাজ শুরু করবে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে কি পরিমান টাকা আত্মসাত হয়েছে তা জানা যাবে বলে তিনি জানান।
তবে সম্ভাব্য টাকার অঙ্ক জানাতে পারেনি ওই কর্মকর্তা।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More