স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
‘বিড়ি ভাঙতি আইছি, এখন নিয়ে আইছে মিছিলে। আমি তো জানি না কি হইছে। আমারে তো হাজার হিসেবে টাহা দেয়।’ বলছিলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বিড়িশ্রমিকদের বিক্ষোভ পরবর্তি মানববন্ধনে আসা শিশু রানা শেখ।
বয়স তার তের (১৩)। রানার মতো শতাধিক শিশু রোবাবার দুপুরে মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেয়। এদের সবাই ওই উপজেলার ঘোষগাতি এলাকার আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির বিড়িশ্রমিক।
রানা শেখর বাড়ি মোল্লাহাটের গাংনী এলাকায়। তার বাবা জেল্লাল শেখ। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মেঝ রানা। সে জানায়, তার বড় দুই বোন ও এক ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে, তাদের আলাদা সংসার।
‘বাবাও অসুস্থ তাই স্কুলে যেতে পারিনা, টাকার জন্য বিড়ি ভাঙি (তৈরি করি)।’
এখানে কাজ করতে ভালো লাগে? এমন প্রশ্নে বিচলিত রানা বলেন, ভালো তো লাগে না! কিন্তু কাজ না করলে কি করে হবে?
বাংলাদেশ বিড়িশ্রমিক ফেডারেশন বাগেরহাট জেলা শাখার ব্যানারে বিড়ি শিল্পের জন্য পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক শুল্কনীতি এবং এই শিল্প নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলীপি প্রদান করে বিড়িশ্রমিকরা।
নয় মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারী শ্রমীক মুক্তা বেগম (১৭) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমরা সবাই আকিজ বিড়ির কারখানায় কাজ করি। সবাইরে নিয়ে আইছে, তাই আমারাও এখানে আইছি।
উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের শিশু ইয়াসিন শেখ (১২) বলেন, সকালে কাজে আসলে আমাদের সবাইকে এখানে নিয়ে আসে। আমরা হাজার হিসাবে কাজ করি। প্রতি হাজার বিড়ি তৈরিতে ১৫ টাকা করে দেয়। এভাবে দিনে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা পাই।
আকিজের শিশু শ্রমিক সনিয়া আক্তার (১২) পিঙ্কি আক্তার (১৩), ইয়াসিন (১২) সহ আরও কয়েক
বিড়িশ্রমিকের সাথে কথা বলার সময়ে মানববন্ধনের আয়োজকদের পক্ষ থেকে তাদের কথা বলতে বাঁধা দেওয়া হয়। পাশ থেকে বলতে বলা হয় বল, তোমরা এখানে কাজ করো না, এমনি আইছো।
শুধু বিড়ি শ্রমিক নয় মানববন্ধনে আজিক বিড়ির কয়েকজন বিক্রিয় প্রতিনিধির সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কেন এখানে এসেছেন এমন প্রশ্নে তাদের অধিকাংশই বলেছেন, আসতে বলেছে তাই আসছি। কি আন্দলোন বা কেন আন্দোলন তা বলতে পারেন না।
বিড়ি শিল্প রক্ষার আন্দোলনে যোগ দেওয়া যে ১৭ জন শিশু শ্রমিকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ছয় মাস থেকে সাড়ে ৪ বছর ধরে ওই কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন।
মানববন্ধনে কারখানার প্রায় পাঁচ শতাধিক বিড়িশ্রমিক অংশ নেন। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন ‘আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে বিড়ি থাকবে না’।
এই বক্তব্য এবং বিড়ি শিল্পের জন্য বৈষম্যমূলক শুল্কনীতির প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিড়িশ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হাকিম, সহ-সম্পাদক মো. হারিক হোসেন, জেলা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, চরম বৈষম্যমূলক শুল্কনীতির কারণে বর্তমানে বিড়ি শিল্প ধ্বংসের পথে। এই শিল্পের সঙ্গে সারা দেশে ১৭ লাখ বিড়িশ্রমিকের জীবন-জীবিকা জড়িত। এ শিল্প বন্ধ করে দেবার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে সারাদেশের বিড়ি শ্রমিক ও তাদের পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তারা বলেন, যদি বিড়ি বন্ধ করতে হয় তা হলে সিগারেটও বন্ধ করতে হবে। বিড়িও ধুমপান, সিগারেটও ধুমপান। সারাদেশে বিড়িশ্রমিকদের পরিবার মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ লোক চলে এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে। বিকল্প কাজের সুযোগ সৃষ্টি না করে বিড়ি শিল্প বন্ধের এই বৈষম্যমূলক নীতি কোনো ভাবে মেনে নেওয়া হবে না।
এইচ//এসআই/বিআই/১৪ মে, ২০১৭
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More