নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম

সারাদেশে পাল্লা দিয়ে সংক্রমণ বাড়লেও নানামুখী উদ্যোগে শুরু থেকেই করোনার বিস্তার লাভ করেনি বাগেরহাট। ভিন্ন জেলা থেকে আসা শিশুসহ ৩ জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়লেও দ্রুতই সেরে উঠেছেন তারা।
তবে কিছু দিন হলো সব উদ্যোগ যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। ঘরে থাকা তো দূরের কথা, রাস্তা ঘাটে যেন জনস্রোত। এরই মাঝে রোববার, ১০ মে থেকে খুলছে বাগেরহাটের সব দোকানপাট।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর এখন ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মানুষ স্বাস্থ্য বিধির কোনো শর্তই তেমন মানছে না।
শিল্প ও বণিক সমিতি বলছে, সরকারের দেয়া সব শর্ত মেনেই দোকান মালিকরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শর্ত ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলছে প্রশাসন।
মধ্য এপ্রিলে জেলা চিতলমারী উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়া শিশুসহ ৩ জনই অন্য জেলা থেকে আক্রান্ত হয়ে বাগেরহাটে আসে। তারা সেরেও উঠেছেন। ফলে বাগেরহাট জেলা এখন করোনামুক্ত বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে ঈদকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালুর উদ্যোগ হিসেবে দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে ধারণা অধিকাংশের।
সরকার দোকানপাট খোলার অনুমতি দিলেও অনেক জেলায় তা বন্ধ রাখছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঝুঁকির মাঝেও বাগেরহাটে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনে গত ২৬ মার্চ থেকে জেলার দোকান মালিকরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। এসময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ওষুধের দোকান খোলা রাখা হয়। শুরুতে কঠোরতা এবং মানুষের সচেতনতা লক্ষ করা গেলেও, ঝুঁকি ভুলেই গেল ক’দিন থেকে মানুষ বের হচ্ছে। ফলে হাটবাজারে ভিড় আবার অনেক স্থানে ব্যবসায়ীরাও নির্দেশনা না মেলে দোকান খোলা রাখছে।
করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টি মেনে নিয়েই দোকানমালিকেরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় নিয়ে জীবিকার তাগিদে দোকান খুলতে হচ্ছে। তবে অনেকেই মনে করছেন ভিড় বাড়লে সুরক্ষা মানা সম্ভব হবে না। সীমিত সময়ের জন্য দোকান খোলা থাকায় ক্রেতাদের তাড়াহুড়ো থাকবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল শর্ত মেনে ১০ মে থেকে জেলার দোকানপাট থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে। এখানকার দোকান মালিকদের সরকারের দেয়া শর্ত অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দোকানগুলোতে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করা, মুখে মাক্স, হ্যান্ড গ্লোভস পরতে হবে। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা বানিজ্য করতে হবে।
সার্বিক তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম মাঠে থাকবে। নির্দেশনার অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাট শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, সরকারের দেয়া সব শর্ত মেনে এখানকার ব্যবসায়িরা বেচাকেনা করবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ওষুধের দোকান বাদে দীর্ঘ দেড় মাস জেলার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ব্যবসায়িরা কেনাবেচা করে যদি কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন।
বাগেরহাট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বাগেরহাট জেলায় তা প্রতিরোধে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ নেয়। জনসমাগম রোধ, সচেতনতামূলক প্রচারণা, বহিরাগতদের ঠেকাতে সীমান্তে চেক পোস্ট বসায় প্রশাসন। যার কারনে এই জেলায় ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
৫ এপ্রিল থেকে জেলায় এই ভাইরাস শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাগেরহাটে শিশুসহ মোট তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। তারা কেউই বাগেরহাটে বসে করোনায় আক্রান্ত হননি। সবাই জেলার বাইরে থেকে বাড়িতে ফেরেন। তারা সবাই এখন করোনামুক্ত।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত এই জেলা থেকে ২৬৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। এরমধ্যে ২৩০টি প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। এরমধ্যে তিনজনের পজেটিভ হয়। যাদের একজনের মৃত্যু হয় ঢাকাতে।
সিভিল সার্জন, বাগেরহাট।
সম্প্রতি দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিন হুহু করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বাগেরহাটে দোকানপাট খুলে দেয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে সরকার যেহেতু দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন সে বিষয়ে জোর দেন ডা. হুমায়ুন কবির।
করোনার এখনও কোন প্রতিষেধক নেই। তাই নিজেকে ও পরিবারকে সংক্রামণ থেকে বাঁচাতে একটাই পথ তাহলো ঘরবন্দি থাকা। তাই বাগেরহাটবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না আসার পরামর্শ তার।
জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, সামনে শনাক্তের সংখ্যা ও ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া লকডাউন থাকায় অদৃশ্য রোগীরা (মৃদু উপসর্গ) এখন ছড়াতে পারছে না। দোকানপাট খুললে তারা বেরিয়ে পড়বে। এতে সংক্রমণের বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে। আর ঈদের আনন্দ বিস্বাদে পরিণত হতে পারে।
এজি/আইএইচ/বিআই/০৯ মে, ২০২০
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More