জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পােনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রশাসন।
জরুরি সভা করেছে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটি জেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ চার উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও রামপালের প্রশাসন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় লোকজন যাতে থাকতে পারে সেজন্য জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও স্বা স্ব উপজেলার স্কুল ও কলেজগুলো খুলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ দেশের খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আম্পান ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে উপকূলীয় জনপদে এখনও এর তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সোমবার দিনভরই বাগেরহাটের আবাহাওয়া ছিল রৌদ্র উজ্জল। তবে তাপমাত্রা বাড়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। ফলে অস্বস্তি বেড়েছে জনজীবনে।
দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বাভাবিকভাবে রয়েছে মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ। মোংলা বন্দরের বর্তমানে ১১টি দেশি বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে।
এদিকে মাঠের পাকা বোরো ধান যেন নষ্ট না হয় তাই দুর্যোগ শুরুর আগেই তা কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগ জেলার ৮৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলেছে। বাকি ১৫ ভাগ ধান কাল সকালের মধ্যে কাটা শেষ করতে পারবে বলে আশা তাদের।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যে আবহাওয়া বিভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পূর্বাভাস জারি করেছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে জরুরী সভা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
দুর্যোগের আগে মাঠে থাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হওয়ছে।
উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই আশ্রায় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যেতে স্থানীয় লোকজন থাকতে পারে সেজন্য জেলার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্কুল ও কলেজগুলো খুলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। চারটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৯৭টি রিপার ও হ্যান্ড রিপার এবং স্থানীয় সেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ইতিমধ্যে মাঠের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে মাঠে থাকা বাকি ১৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করছেন। দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই সব ধান কৃষকের ঘরে উঠে যাবে বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ি মোংলা বন্দরে স্থানীয় ৪ নম্বর হুশিঁয়ারি সংকেত জারি রয়েছে। বন্দরে বর্তমানে সার, ফ্লাইএ্যাশ, কয়লাবাহীসহ মোট ১১টি দেশি বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে। বিকেল নাগাদ আরও নতুন চারটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা রয়েছে।
বন্দরে অবস্থান নেয়া জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বন্দরে একটি ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এসআই/আইএইচ/বিআই/১৮ মে, ২০২০
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More